রোববার আদালতে এরকম ১৬ জনকে জরিমানা পরিশোধ করে ছাড়িয়ে আনে বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে রাশ টানতে গত বৃহস্পতিবার থেকে কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপের পর ঘর থেকে কেউ বের হলেই পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হচ্ছে।
‘অপ্রয়োজনে’ বের হওয়ায় গত চার দিনে ২ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুধু ঢাকাতেই।
লকডাউন শুরুর আগে শ্রমজীবী মানুষ কাজ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিল। বিভিন্ন সংগঠন বলছিল, ঘরে খাবার না থাকলে লকডাউন দিয়ে নিম্ন আয়ের এসব মানুষকে ঘরে আটকে রাখা যাবে না।
গত কয়েকদিনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন আসকের মহাসচিব নূর খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “লকডাউনে যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ।”
রোববার এই সমস্ত মানুষকে সহায়তার জন্য আসক ও ব্লাস্টের পক্ষ থেকে আদালতে আইনজীবী পাঠানো হয়। তখন দেখা যায়, ১৬ জন একেবারে হতদরিদ্র ব্যক্তি, যাদের জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্যও নেই।
“পরে আসক আটজনের এবং ব্লাস্ট আটজনের জরিমানার টাকা পরিশোধ করে তাদের ছাড়িয়ে আনে। জরিমানা অনাদায়ে তাদের কারাদণ্ড হতে পারত,” বলেন নূর খান।
কঠোর লকডাউনের চার দিনে ২ হাজার ১০৯ জনকে গ্রেপ্তারের কথা রোববার জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এর মধ্যে রোববার গ্রেপ্তার হন ৬১৮ জন।
গত কয়েকদিনে গ্রেপ্তার সবাইকেই ঢাকা মহানগর পুলিশ অধ্যাদেশের (ডিএমপি অ্যাক্ট) কয়েকটি ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠাচ্ছে পুলিশ।
শনিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক মানুষ তাদের গ্রেপ্তারদের স্বজনদের ছাড়াতে আদালতে ধরনা দিচ্ছে।
এই ব্যক্তিদের বেশভূষাই বলে দিচ্ছিল তারা বিত্তহীন পরিবার থেকে আসা। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কেউ দোকানকর্মী, কেউ রাজমিস্ত্রী, কেউ পরিবহন শ্রমিক, কেউ বা ভাসমান ব্যবসায়ী।
স্বজনদের মুক্ত করতে আইনজীবীদের পেছনে পেছনে ঘুরছিলেন তারা।
ডিএমপি অ্যাক্টের ১০০ ধারায় পুলিশকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ৭৭ ও ৭৮ ধারায় যথাক্রমে চলাচলে বাধা সৃষ্টি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযোগ এবং ৬৯ ধারায় বিধি নিষেধ ভঙ্গ করে দোকান বসানোর কথা বলা আছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মহাসচিব নূর খান বলেন, আদালতের জরিমানা, আইনজীবীর খরচ, যাতায়াত ইত্যাদি সব মিলিয়ে আটক একেকজনকে ছাড়া পেতে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
“অথচ এই ধরনের মানুষ কিন্তু পেটের দায়েই রাস্তায় বের হচ্ছে,” বলেন তিনি।