লকডাউন: সারা দিনে ঢাকায় গ্রেপ্তার ৫৫০, জরিমানা ২১২ জনকে

ঘোষণা ছিল কঠোর লকডাউনে কঠোর থাকবে পুলিশ; প্রথম দিনে তাই দেখা গেল রাজধানীতে। ঘর থেকে ‘অপ্রয়োজনে’ বের হয়ে গ্রেপ্তার হতে হল ৫৫০ জনকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2021, 04:16 PM
Updated : 1 July 2021, 06:21 PM

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের এই লকডাউনে বৃহস্পতিবার সারাদিনে তৎপর থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) রাতে এই তথ্য জানায়।

এর আগে সকাল থেকেই বিভিন্ন সড়কে থাকা মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সন্তুষ্ট না হলে আটক করছিল পুলিশ। দুপুর নাগাদ এই সংখ্যাটি আড়াইশ পেরিয়ে গিয়েছিল।

তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার সাইফুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে কাউকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, কাউকে জরিমানা করা হচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইনে মামলা করা হচ্ছে।”

রাতে ডিএমপির মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, ৫৫০ জনের বিরুদ্ধে ডিএমপি অধ্যাদেশে মামলা করা হয়েছে। মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন ৩৯১ জন।

এর বাইরে ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করেছে ২১২ জনকে।

২৭৪টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে বলে ডিএমপি জানায়।

লকডাউনে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, সেনা সদস্য ও বিজিবি সদস্যরাও লকডাউন বাস্তবায়নে ঢাকায় সক্রিয় ছিল।

করোনভাইরাস মহামারী ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে যানবাহনশূন্য ঢাকার বিজয় সরণি মোড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য এই কঠোর লকডাউন শুরু হল।

প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার দিনভর রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা তার মধ্যেই ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেন। আবার বৃষ্টির তোড় বাড়লে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দৌড় দিচ্ছিলেন।

বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মানিকনগর এলাকায় একটি চেকপোস্টে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা যায়, থানা পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা পথ চলতি গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন।

চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তা বা ব্যাংকারদের পরিচয়পত্র দেখে যেতে দেওয়া হচ্ছিল। তবে গাড়িতে একাধিক যাত্রী থাকলে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বেশি।

সর্বাত্মক লকডাউনে ঢাকার রাস্তায় কেউ বের হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কর্মকর্তাদের ওয়্যারলেসে ঊর্ধ্বতনদের নির্দেশনা আসতে থাকে।

রাস্তায় আরও কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়, গলিগুলোর একপাশ থেকে দল বেঁধে ঢুকে লোকজনকে বাড়িতে ঢোকানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। আর বিনা কারণে বের হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিএমপি অধ্যাদেশ অনুযাযী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

নির্দেশনা পেয়ে কর্মকর্তারা আরও তৎপর হয়ে ওঠেন। এরপরে প্রতিটি যানবাহন থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করেন তারা।

বিধি-নিষেধ মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা যাচাই করতে পুলিশের মতো র‌্যাবও বিভিন্ন মোড়ে তল্লাশি চৌকি বসিয়েছে।

মাস্ক না পরায় মিরপুর দারুস সালাম সড়কে তিনজনকে জরিমানা করে র‌্যাব-৪ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে দুজন গাড়িচালক এবং একজন মোটরসাইকেল চালক।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান ওই সড়কে গাড়ি এবং পথচারীকে থামিয়ে চলাচলের কারণ জানতে চান। যারা যৌক্তিক কারণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের তিনজনকে সাজা দিয়ে বাকিদের সতর্ক করে দেন তিনি।

করোনাভাইরাস মহামারীর বিস্তার ঠেকাতে কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে চেকপোস্ট বসায় র্যাব। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

এসময় সাদা কাগজে ‘জরুরি ওষুধ সরবরাহ ও উৎপাদন’ লেখা একটি ফার্মসিউটিক্যাল কোম্পানির স্টিকার লাগানো গাড়ি আটক করা হয়। চালক সুজন মিয়ার মুখে মাস্ক ছিল না, কোম্পানির কোনো পরিচয়পত্রও তিনি দেখাতে পারেননি। পরে মাস্ক না পরায় তাকে এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইভাবে একটি প্রাইভেটকারের চালককে দুইশ টাকা এবং একজন মোটরসাইকেল চালককে পাঁচশ টাকা জরিমানা করা হয়।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, “করোনাভাইরাস রোধে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা শুধু জরিমানা করছি না, কাউকে সতর্কও করছি। পাশাপাশি মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে।”

বারডেমের সামনে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, “সকাল থেকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত যাদেরকে পেয়েছি অধিকাংশই প্রয়োজনে বের হয়েছেন। কেউ চিকিৎসার জন্য বের হয়েছেন, কেউবা বিদেশ যাবেন।”