সেখানে দাঁড়াতেই ছুটে এসে বললেন, “একটা কাজ দেও বাবা”।
হুড়োহুড়ি করে এলেন আরও ৩০-৩৫ জন। তারা সবাই দিনমজুর।
দিন এনে দিন খাওয়া এসব মানুষের কপালে নতুন করে চিন্তার রেখা এঁকেছে লকডাউনের বিধিনিষেধ।
বৃদ্ধ লাল মিয়া বললেন, “১৫ দিন কোনো কাজ পাই না, বুড়া হয়ে গেছি বলে কেউ নেয় না।”
ওই মার্কেটের সামনে কেউ এলেই ভাবছেন- কেউ বুঝি শ্রমিকের সন্ধানে এসেছেন!
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া সর্বাত্মক লকডাউনেও ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই তাদের কারও।
“আমি ঘরে থেকে কী করব, না খেয়ে মরব? কেউ যদি একটা কাজ দেয়, দিন শেষে কয়েকটা টাকা পাইলে কিছু কিনে খেতে পারব।”
লাল মিয়ার বাড়ি ফরিদপুরে। কয়েক বছর আগে স্ত্রীকে হারিয়ে দুই ছেলে আর দুই মেয়েকে নিয়ে সংসারের হাল ধরে আছেন। এর মধ্যে সহায়-সম্বল বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। আর ছেলে দুটি বড় হলেও তারা বেকার।
“ছেলেরা কিছু করতে পারে না। কোনো কাজ পায় না। যেদিন মজুরি করে আমি কিছু রোজগার করতে পারি, সেদিন এদের জন্যও কিছু কিনে নিতে পারি।”
লাল মিয়ার মত কাজের সন্ধানে ওই মার্কেটের সামনে এসেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের মুজিবর তালুকদার। স্ত্রী আর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তার সংসার।
গত ৯-১০ দিন কাজ পাননি জানিয়ে বললেন, “ঘরে জমানো টাকা-পয়সা নাই। কোনো খাবার-দাবার নাই। সংসার কীভাবে চলবে বুঝতে পারতেছি না। এভাবে যদি লকডাউন চলতে থাকে তাহলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।”
দিন চুক্তির মজুরিতে কাজ পাওয়ার আশায় কাজী আলমও খুব সকালেই ঘর ছেড়ে বেরিয়েছেন। তার বাড়ি পিরোজপুরে।
তিনি বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই কাজ পাই না। হঠাৎ হঠাৎ সুযোগ হলেও মজুরি অল্প হয়, যেখানে আগে ৫০০-৬০০ টাকা পেতাম, এখন ২০০ থেকে ৪০০ টাকার বেশি কেউ দিতে চায় না। তারপরও এখানে আসি কোনো একটা কাজের ব্যবস্থা যদি হয়, ভাগ্য যদি ভাল হয় হয়তো কোনো কাজ পেতেও পারি।”
রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন শাহাব উদ্দিন, বাড়ি পটুয়াখালী। এক সপ্তাহ হলে কোনো কাজ জোটেনি তারও। জানালেন, শহরে এখন নির্মাণ কাজ ততটা নেই, তাই অন্য যে কোনো কাজ হোক তিনি করতে চান।
শাহাব উদ্দিনের সংসারে স্ত্রী আর ছোট দুটি বাচ্চা রয়েছে। তিনি বললেন, “লকডাউন যদি বেশি দিন থাকে তাহলে আমরা কী করব, কী খাব, ভেবে পাই না।
“সরকার যদি আমাদের কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিত তাহলে বাল-বাচ্চাদের মুখে কিছু দিতে পারতাম। এমনিতেই কাজ নাই, আবার লকডাউনে কাজ পাব-কিনা জানি না। আমি এখন সব অন্ধকার দেখতেছি।”