কোভিড: বাংলাদেশে মর্ডানার টিকার জরুরি অনুমোদন

মার্কিন কোম্পানি মডার্নার তৈরি টিকা জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর; যা বাংলাদেশে অনুমোদন পাওয়া আট নম্বর টিকা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2021, 04:31 PM
Updated : 2 July 2021, 06:12 PM

মঙ্গলবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এক চিঠিতে এই কথা জানানো হয়েছে।

এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের আটটি টিকার অনুমোদন দেওয়া হলো।

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “মডার্নার টিকা জরুরি ব্যবহারে অনুমোদন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে আবেদন করা হয়েছিল।

“এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ভ্যাকসিনটির ডোসিয়ার (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পার্ট, সিএমসি পার্ট এবং রেগুলেটরি স্ট্যাটাস) মূল্যায়নপূর্বক কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সির ক্ষেত্রে ঔষধ, ইনভেস্টিগেশনাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন এবং মেডিকেল ডিভাইস মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে মডার্নার টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত রোববার এই অনুমোদন দেওয়া হয়। মডার্নার টিকার বাংলাদেশে স্থানীয় এজেন্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।

বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানি মডার্নার তৈরি করোনাভাইরাসের ২৫ লাখ ডোজ টিকা আগামী ২ অথবা ৩ জুলাই বাংলাদেশে এসে পৌঁছুবে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

মঙ্গলবার রাতে রয়টার্সও মর্ডানার তৈরি টিকা বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে বলে সংবাদ দিয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন পাস্কির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২৫ লাখ ডোজ টিকা মঙ্গলবার পাঠানো শুরু হবে।

এই টিকা আসার আগেই প্রয়োজনীয় এই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

মর্ডানার আগে দেশে সর্বশেষ অনুমোদন দেওয়া হয় চীনের উদ্ভাবিত একটি টিকা। যেটি উদ্ভাবন করেছে ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল বায়োলজি অব দ্য চাইনিজ একাডেমি অব মেডিকেল সায়েন্সের টিকা। সংক্ষেপে একে আইএমবি ক্যাম্পস বলা হচ্ছে।

গত ২৪ জুন ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীদের দেহে টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল-বিএমআরসি।

এর আগে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের ধাপ পেরিয়ে স্বীকৃতি পাওয়া অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ড, রাশিয়ার টিকা স্পুৎনিক ভি, চীনের সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের টিকা, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা এবং জনসনের টিকা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদন পেয়েছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্ম ও ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার প্রয়োগও হচ্ছে।

মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, “কোভ্যাক্স থেকে আমরা কনফার্মেশন পেয়েছি। ২ অথবা ৩ তারিখে (জুলাই) আমাদের এখানে টিকা পৌঁছে যাবে ইনশাআল্লাহ। এই চালানে ২৫ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে।

“এটা ভালো খবর আমাদের জন্য। এটা পেলে টিকাদান কর্মসূচী আরও বেগবান হবে।”

বিশ্বজুড়ে টিকা সরবরাহের আন্তর্জাতিক প্লাটফর্ম কোভ্যাক্স থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মর্ডানার এই টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ।

এর আগে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে বাংলাদেশ ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ টিকা পেয়েছে, যে চালান এসে পৌঁছায় গত ৩১ মে।

পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকার তিনটি হাসপাতালে এই টিকা ‌প্রয়োগও করা হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সৌদি আরব ও কুয়েতগামী প্রবাসী কর্মীদের এই টিকা দেওয়া শুরু হবে।

মর্ডানার টিকা এলে তা হবে দেশে কোভিডের চতুর্থ টিকা।

মার্কিন এই কোম্পানির টিকা ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষকে দেওয়া যায়। প্রত্যেককে এই টিকা দুই ডোজ করে দিতে হয়।

প্রথম ডোজ দেওয়ার ২৮ দিন পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মডার্নার টিকা ৩০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই টিকা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যাবে।

মডার্নার এই টিকা গত ২২ জানুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। এর আগে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের এফডিএ এবং ৬ জানুয়ারি ইউরোপিয়ান মেডিসিন অথরিটির অনুমোদন পায় এটি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে এটি ৯৪ দশমিক ১ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রোজেনেকার কোভিশিল্ড দিয়ে দেশে শুরু হয় টিকাদান কর্মসূচী। এপ্রিলে ভারত থেকে এই টিকার নতুন চালান না এলে টিকা দেওয়া স্থগিত করা হয়।

পরে চীনের সিনোফার্ম এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের ফাইজারের টিকা এলে দেশে আবার টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়।