বৃহস্পতিবার তিনি জেনারেল আজিজ আহমেদের কাছ থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর জানায়।
এর আগে একই দিনে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তাকে র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল এম শাহীন ইকবাল এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল শেখ আব্দুল হান্নান।
আইএসপিআর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আজিজ আহমেদের কাছ থেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের পর জেনারেল শফিউদ্দিন ঢাকা সেনানিবাসে শিখা অনির্বাণে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এরপর সেনাকুঞ্জে সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল নতুন সেনাপ্রধানকে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়।
এদিকে দায়িত্বভার হস্তান্তরের পর সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজকে সামরিক রীতিতে বিদায় জানানো হয় বলে আইএসপিআর জানিয়েছে।
জেনারেল আজিজ ২০১৮ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তার অবসরের আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত ১০ জুন নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে এস এম শফিউদ্দিনের নাম ঘোষণা করে।
সেনাসদরের কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এস এম শফিউদ্দিন ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পদাতিক কোরে কমিশন পান।
গত বছর ডিসেম্বরে তাকে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের (অ্যার্টডক) জিওসির দায়িত্ব থেকে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) করে সেনাসদরে নিয়ে আসা হয়েছিল।
তার আগে ২০১৯ সালের অগাস্টে মেজর জেনারেল থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হন শফিউদ্দিন আহমেদ। তখনই তাকে অ্যার্টডকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন, একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং একটি পদাতিক ডিভিশনসহ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে নেতৃত্বের ভূমিকায় দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১২ সালের মে মাসে পদোন্নতি পেয়ে মেজর জেনারেল হওয়ার পর সরকার তাকে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির দায়িত্ব দেয়। পরে তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) মহাপরিচালক হন।
এসডিএস (আর্মি-১) এর এনডিসি এবং লজিস্টিকস এরিয়ার জিওসি ও এরিয়া কমান্ডারের দায়িত্বও পালন করেছেন শফিউদ্দিন আহমেদ।
গত শতকের নব্বইয়ের দশকে মোজাম্বিকে ১৬ মাস শান্তিরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা। পরে ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে শান্তিরক্ষী মিশনে ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন শফিউদ্দিন।
তিনিই প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, যিনি শন্তি মিশনে মাল্টিন্যাশনাল ফোর্স কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ পান।
১৯৬৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর খুলনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন শফিউদ্দিন আহমেদ। তার বাবা শেখ মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন অধ্যাপক, সমাজ সেবক, রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৮০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যস্ত রোকন উদ্দিন আহমেদ টানা দুই যুগ একজন নির্বাচিত জন প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খুলনার ‘প্রফেসর রোকন উদ্দিন সড়ক’ তার নামেই হয়েছে।
শফিউদ্দিন আহমেদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর করার পর এমআইএসটিতে এমবিএ এবং ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সিকিউরিটিজ স্টাডিজে এমফিল করেন। বর্তমানে তিনি বিইউপিতে পিএইচডি করছেন।
জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ও তার স্ত্রী বেগম নুরজাহান আহমেদ দুটি কন্যা সন্তানের বাবা-মা।