নাসির-অমি এবার পরীমনির মামলায় রিমান্ডে

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে পাঁচ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2021, 12:09 PM
Updated : 23 June 2021, 04:33 PM

এর আগে মাদকের মামলায় এ দুজনকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।

এরপর পরীমনির মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আরও ১০ দিন হেফাজতে রাখতে আদালতে আবেদন করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে।

বুধবার তার শুনানি হয় ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রাজিব হাসানের আদালতে।

নাসির আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, “ওই ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

তিনি বলেন, “আমার বয়স ৬৫ বছর। আমার হৃদপিণ্ডে সমস্যা রয়েছে। আমাকে প্রয়োজনে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন, রিমান্ডে দেবেন না। এক মামলায় আমি রিমান্ডে ছিলাম, আবার রিমান্ডে দিলে আমি মরে যাব।”

আসামি পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ও আসাদুজ্জামান রচিও রিমান্ডের বিরোধিতা করেন।

অন্যদিকে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নতুন পিপি শেখ হেমায়েত হোসেন রিমান্ডের পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

শুনানি শেষে বিচার পাঁচ দিন রিমান্ডের আদেশ দিয়ে পুলিশকে বলেন, সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে এবং এ সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মানতে হবে।

নাসির ও অমি ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য ছিলেন। ওই ক্লাবে হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ পরীমনি তোলার পর তাদের বহিষ্কার করা হয়।

পরীমনি সম্প্রতি অভিযোগ করেন, পূর্ব পরিচিত অমি গত ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বোট ক্লাবে নিয়ে যান এবং সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন।

পরে সাভার থানায় পরীমনি মামলা করার পরপরই নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তাদের কাছে মাদকদ্রব্য পাওয়ার কথা জানিয়ে আলাদা মামলা করে পুলিশ।

চিত্রনায়িকা পরীমনি।

শুনানিতে পরীমনিকে নিয়ে প্রশ্ন

শুনানিতে নাসির ও অমিকে রিমান্ডে চাওয়ার পেছনে যুক্তি দেখিয়ে হেমায়েত হোসেন খান বলেন, ‘ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ধ্বংস করার জন্য’ আসামিরা চেষ্টা করছে। এই ধর্ষণের চেষ্টার উপযুক্ত বিচার না হলে ‘শিল্প-সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাবে’। এ রকম একজন সেলেব্রিটির সঙ্গে এ রকম আচরণ করা অন্যায়। 

এর বিরোধিতা করে আসামিপক্ষের আইনজীবী ঢাকা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুন বলেন, “সেলেব্রিটি বলে শুধু উহ আহ করবেন! মিডিয়া ট্রায়াল হবে? এটাও ঠিক নয়।

“রাত ১২টার পরে বারে পরীমনি গেলেন কেন? শরীরে আঁচড় লাগলে ডিএনএ টেস্ট করা হোক। আলামত ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হোক। ভিডিও ফুটেজ আসুক। সেলেব্রিটি কি শুধু বাদী নিজে, আমরা কি কেউ নই?”

নাসির ও অমিকে এক মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার পর এখন আরেক মামলায় রিমান্ডে চাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন তিনি।

আসামিপক্ষের আরেক আইনজীবী এ এইচ ইমরুল কাউছার তিনটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন পড়ে শুনিয়ে বলেন, “দেখুন ইউর অনার, পরীমনি কে? পরীমনির ঘরেই মদের পাহাড় রয়েছে। তিনি স্বেচ্ছায় ওই খানে মদপান করেছেন।”

নাসিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “পিতার বয়সী একজন এ কাজ করবে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

এসময় আরও কয়েকজন আইনজীবী একসঙ্গে কথা বলতে গেলে বিচারক রাজীব হাসান তাতে বাধা দিয়ে একজন একজন করে কথা বলতে বলেন।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী ঢাকা বারের সভাপতি আবদুল বাতেন এজাহারের বিভিন্ন বক্তব্য খণ্ডন করতে থাকেন।

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “তাকে (পরীমনি) কোনো ফোর্স করা হয়নি। ওপেন জায়গায় অনেক মানুষ ছিল, ধর্ষণের চেষ্টা ওই খানে হতে পারে না।

“অমির দোষ কোথায়? তিনি তো বন্ধু হিসাবে গিয়েছেন। তার তো কোনো অভিযোগে সম্পৃক্ততা নাই। আর নাসির সাহেবেরই কী দোষ? তার মান সম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য এ মামলা।”