রোগী বাড়ছে ঢাকার হাসপাতালে

গত কয়েকদিন ধরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে ঢাকার হাসপাতালগুলোয় রোগীর চাপ আবার বাড়তে শুরু করেছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2021, 06:01 PM
Updated : 21 June 2021, 06:16 PM

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, সামনে হাসপাতালগুলোয় ভিড় আরও বাড়বে।

সোমবার ঢাকার সরকারি-বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর সাধারণ শয্যায় ১ হাজার ৫২২ জন রোগী ভর্তি ছিল।

ঠিক এক সপ্তাহ আগে ১৪ জুন এসব হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ১২৮ জন। এ সময়ে হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যায়ও রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

সোমবার ঢাকার ৪টি কোডিভ ডেডিকেটেড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে কোনো শয্যা ফাঁকা ছিল না।

সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনের তথ্য থেকে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিউতে কোনো শয্যা খালি নেই।

এদিন রাজধানীর কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউর ৩৮৪টি শয্যার মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ১৯৫টি।

১৪ জুন ঢাকার কোভিড ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতালগুলোর ৩৮৪টি শয্যার মধ্যে ফাঁকা ছিল ২৩৪টি শয্যা।

সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪ হাজার ৬৩৬ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এইদিন মৃত্যু হয়েছে ৭৮ জনের।

এক দিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা গত নয় সপ্তাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এর আগে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ১৪ এপ্রিল এক দিনে ৫ হাজার ১৮৫ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর এসেছিল।

বিভাগওয়ারি হিসাবে ঢাকায় বিভাগে মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৮৩৭ জন হয়েছে, যা সারা দেশের মোট শনাক্তের প্রায় ৪০ শতাংশ। এদিন ঢাকা বিভাগে শনাক্ত হওয়া নতুন রোগীদের মধ্যে ১২৯৪ জনই ঢাকা মহানগরের। গত একদিনে ঢাকা বিভাগেই সবচেয়ে বেশি ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতালে রোগীর চাপ সম্প্রতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান।

সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সংক্রমণ বাড়তে থাকায় হাসপাতালে রোগী বেড়েছে।

“সপ্তাহখানেক আগেও আমাদের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগী থাকতো ৬০ থেকে ৭০ জন। এক সপ্তাহ যাবত ভর্তি রোগী একশোর উপরে থাকছে। আজকে ভর্তি আছে ১০৩ জন। আমাদের এখানে ১০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১-২টিতে রোগী ভর্তি ছিল, আজ কোনো বেড ফাঁকা নেই।”

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের পুরোনো ধরনের সঙ্গে ডেল্টা ধরন যোগ হয়ে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এ কারণে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর।

সোমবার রাতে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রোববার পর্যন্ত মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। সোমবার রোগী আরও বেড়েছে।

“ভারতে ডেল্টা ধরন শুরুর পর আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, চেষ্টা করার পরও সংক্রমণ রোধ করতে পারি নাই। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। মানুষ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে পারবে না। এটা তো অদৃশ্য শক্তি। এখন সিচুয়েশন ইজ গ্র্যাজুয়েলি ওয়ার্সেনিং।”

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের মহাসচিব ডা. আহমেদুল বলেন, চিকিৎসার জন্য মানুষ ঢাকায় আসছে। আক্রান্ত ব্যক্তি ঢাকায় আসার পথে আরও অনেককে সংক্রমিত করছে। এটাও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে।

“আমরা চেষ্টা করেছি ঢাকায় যেন রোগীরা না আসে। কিন্তু তারপরও অনেকেই চলে আসছেন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত একজন ব্যক্তি যখন ঢাকার বাইরে থেকে আসার সময় পুরো ট্র্যাকটাকেই ইনফেকটেড করে আসছে। ভেরিয়েন্ট নিয়ে ঢাকায় আসার সময় তাকে নিয়ে যারা আসছে তারাও আক্রান্ত হচ্ছে। পেশেন্ট ট্রান্সপোর্টের সঙ্গে রোগও আসছে।”

দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত সাড়ে আট লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ৬২৬ জনের।