পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের বিকল্প নিয়ে আদেশ সোমবার

অবসায়ন না করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডকে (পিএলএফএসএল) কীভাবে পুনর্গঠন করা যায় সে বিষয়ে সোমবার আদেশ দেবে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2021, 05:21 PM
Updated : 21 June 2021, 05:21 PM

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য থাকলে তা এই সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

পিএলএফএসএলের আমানতকারীদের আবেদনে সব পক্ষের শুনানির পর বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের একক ভার্চুয়াল বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়।

প্রতিষ্ঠানটির পুনর্গঠন বা পুনরুজ্জীবিত করার নির্দেশনা চেয়ে গত সপ্তাহে ২০১ জন আমানতকারী আইনজীবী শামীম আহমেদ মেহেদীর মাধ্যমে এ আবেদনটি করেছিলেন।

আবেদনে বলা হয়, আইন অনুযায়ী আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের কোনো বিধান নাই। তবে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একীভূত করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের একটি পরিকল্পনা বাংলাদেশ ব্যাংক নিতে পারে।

পিএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে আমানতকারীদের ক্ষতির বোঝা আরও বাড়বে।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আহসানুল করিম। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী তানজীব-উল আলম। আর পিএলএফএসএলের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান।

আইনজীবী আহসানুল করিম বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত সবার বক্তব্য শুনে বলেছেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিবেন। একটা পর্ষদ করে দিবেন, যেখানে আমাতকারীদের একজন প্রতিনিধিও থাকবেন। যেন আমানতকারীরা জানতে পারেন কি কার্যক্রম চলছে।

“কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী বলেছেন, এ বিষয়ে জবাব দিতে তিনি যথেষ্ট সময় পাননি। পরে আদালত তা সোমবারে দাখিল করতে বলেছেন। ওইদিনই আদালত আদেশ দিবেন।”

আদালতের হস্তক্ষেপে পিএলএফএসএলের আমানতকারীদের ৩৪ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানান এই আইনজীবী।

অবসায়কের আইনজীবী মেজবাহুর রহমান বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে যেরকম একটি বোর্ড করে দিয়েছে, সেরকম একটি বোর্ড করে দেওয়ার ব্যপারে আদালত আদেশ দিবেন। অবসায়ন করবে না, পিপলস লিজিং পুনরুজ্জীবীত করার জন্য একটি বোর্ড করে দিবেন আদালত।”

পিএলএফএসএল থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিয়ে খেলাপি হয়েছেন, এমন ২৮৬ জন ঋণ গ্রহীতাকে গত ২১ জানুয়ারি তলব করে হাই কোর্ট।

সাময়িক অবাসায়ক আসাদুজ্জামান খানের দেওয়া তালিকা দেখার পর সেদিন এ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত।

সেদিনের আদেশে আদালত ২৮৬ জনকে দুই ভাগে হাজির হতে দিন নির্ধারণ করে দেয়। তাদের মধ্যে ১২২ ঋণ খেলাপি নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হননি।

এদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায়, সে বিষয়ে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে আদালত।

তাদের বক্তব্য শোনার পর তলবে হাজির না হওয়া ১২২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

ওই আদেশে বলা হয়, পরবর্তী আদেশ না হওয়া পর্যন্ত তারা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন, সেজন্য সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সতর্ক এবং সজাগ থাকতে নির্দেশ দেওয়া হল।

আর পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) সাময়িক অবাসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুইডেটর) মো. আসাদুজ্জামানকে ওই ১২২ ব্যক্তি বা সত্তার বর্তমান ঠিকানা সরবরাহ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয় তাকে।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস লিজিংকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকের কাছ থেকে মেয়াদি আমানত ও বিভিন্ন ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার করে ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। আর ঋণের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা, এর মধ্যে খেলাপিই ৭৪৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হার ৬৬ শতাংশ।

২০১৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে লোকসান দেয় ওই কোম্পানি। খেলাপি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা আদায় করতে না পারায় আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দিতে পারেনি তারা।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই পিপলস লিজিং অবসায়নের জন্য আদালতে মামলা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই দিনই মামলার শুনানি শেষে অবসায়নের পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয় আদালত।

এছাড়া অবসায়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক পদমর্যাদার একজনকে অবসায়ক নিয়োগ দিতে বলা হয়।

পরে সাময়িক অবসায়ক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক আসাদুজ্জামান খানকে নিয়োগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।