কদমতলীতে তিন খুন: বড় মেয়ে রিমান্ডে

রাজধানীর কদমতলীতে মা, বাবা ও বোনকে হত্যার ঘটনায় পরিবারের বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 01:26 PM
Updated : 20 June 2021, 01:26 PM

পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস রোববার এই আদেশ দেন।

মেহজাবিনকে এদিন আদালতে হাজির করে তার চাচার করা মামলায় সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার পরিদর্শক জাকির হোসাইন।

শুনানি শেষে বিচারক চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। শুনানিতে মেহজাবিনের পক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তাপস পাল জানান।

রিমান্ড আবেদনে বলা  হয়, “প্রাথমিক জিজ্ঞাসাাবদে আসামি বেশ কিছু তথ্য দিলেও কী উদ্দেশ্যে কেন তিনি নিজের বাবা, মা, বোনকে হত্যা করেছেন, আর কেউ এর সাথে জড়িত রয়েছে কিনা- এসব জানার জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।”

শনিবার জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন ৯৯৯ এ একটি ফোন পেয়ে ঢাকার জুরাইনের মুরাদপুরে গিয়ে গৃহকর্তা মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪২) ও মেয়ে জান্নাতুল ইসলামের (২০) লাশ পায় কদমতলী থানা পুলিশ।

মাসুদ রানার বড় মেয়ে মেহজাবিন ইসলাম নিজেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ৯৯৯ এ ফোন করেন। লাশ উদ্ধারের সময়ই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপর শনিবার ভোররাতে কদমতলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন মেহজাবিনের চাচা সাখাওয়াত হোসেন। সেখানে মেহজাবিন ছাড়াও তার স্বামী শফিকুল ইসলামকে আসামি করা হয়। শফিকুল বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পুলিশের ভাষ্য, ৯৯৯ এ ফোন করে মেহজাবিন বলেছিলেন, “তিনজনকে খুন করেছি, তাড়াতাড়ি আসেন, তা না হলে আরও দুইজনকে খুন করব।”

এছাড়া ওই বাড়ি থেকে মেহজাবিনের স্বামী শফিকুল (৪০) এবং তাদের ৪ বছর বয়সী শিশু সন্তানকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবারের সবার প্রতি ‘ক্ষোভ থেকে’ সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ‘শ্বাসরোধে হত্যা করেন’ ২৪ বছর বয়সী মেহজাবিন।

তার স্বামী শফিকুল হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার রাতে তার স্ত্রী তাকে চা দিয়েছিলেন। সেই চা পান করার পর আর কিছু তার মনে নেই।

ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের উপকমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, মাসুদ রানা প্রবাসে থাকতেন। তিন মাস আগে ওমান থেকে দেশে ফেরেন তিনি।

“মেহজাবিনের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, বাবা না থাকায় তার মা তাকে এবং তার ছোট বোনকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাত। এসব নিয়ে প্রতিবাদও করেছিল সে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।

“তার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর ছোট বোনকে দিয়ে ব্যবসা চলছিল। এর মধ্যে তার স্বামী ছোট বোনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছাড়া মেহজাবিনের বাবা মাসুদ রানা ওমানে আরেকটি বিয়ে করেছেন।”

এসব মিলিয়ে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ থেকে পরিবারের ‘সবাইকে হত্যার পরিকল্পনা করেন’ বলে মেহজাবিন পুলিশকে জানিয়েছেন।