‘বিট কয়েনে মুদ্রা পাচার চক্রের’ চার সদস্য গ্রেপ্তার

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে ‘বিট কয়েন’ লেনদেন চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 June 2021, 11:46 AM
Updated : 20 June 2021, 11:46 AM

এরা হলেন- হামিম প্রিন্স খাঁন (৩২), রাহুল সরকার (২১), সঞ্জীব দে ওরফে তিতাস (২৮) ও মো. সোহেল খান (২০)। তাদের সবার বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গায়।

শনিবার রাতে মিরপুর মাজার রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব-৪ তাদের গ্রেপ্তার করে বলে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, “হামিম ওই চক্রেরর হোতা। তারা ইন্টারনেটে অ্যাকাউন্ট খুলে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ক্রিপ্টো কারেন্সি ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে বাংলাদেশি বেশ কিছু অসাধু ডোমেইন হোল্ডার ও ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে অর্থ লেনদেন করে।”

কমান্ডার মঈন বলেন, ওই চক্রটি ডার্ক ওয়েবে পর্নগ্রাফি কেনাবেচার সঙ্গেও যুক্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাদের লেনদেন চলত।

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ভার্চুয়াল মুদ্রা বা ‘ক্রিপ্টো কারেন্সিকে’ অত্যন্ত লাভজনক দাবি করে তারা প্রচার চালাত। এর মাধ্যমে তারা যুবক যুবতীদের অবৈধ লেনদেনে প্রলুব্ধ করত।”

‘ক্রিপ্টো কারেন্সি’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, “আগ্রহীদের প্রলুব্ধ করে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা তারা স্বীকার করেছে।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হামিমের বেশ কয়েকটি ভার্চুয়াল ওয়ালেট রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি ওয়ালেটে গত এক মাসে দেড় কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন জানান, অনেকগুলো ওয়ালেট এখনও খোলা হয়নি। তদন্ত কর্মকর্তারা সেসব খুলবেন।

২০১৩ সালে ফরিদপুরের একটি কলেজ থেকে ইংরেজিতে বিএ (সম্মান) পাস করে হামিম। ইউটিউবে ভিডিও দেখে তিনি কম্পিউটার বিষয়ে পারদর্শী হয়ে ওঠেন।

২০১৩ সালে একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তিনি প্রশিক্ষণও নেন। পরে ‘ক্রিপ্টো কারেন্সির’ বিষয়ে দক্ষ হয়ে ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে বিট কয়েন লেনদেন প্রশিক্ষণ দেন বলে র‌্যাবের ভাষ্য।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিট কয়েন ছাড়াও ‘লাইটকয়েন’, ‘ডৌসকয়েন’, ‘আথ্যারিয়াম’, ‘ব্রাস্ট’ ইত্যাদি ভার্চুয়াল মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গেও জড়িত হামিম।

কমান্ডার মঈন বলেন, “হামিম মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ কার্যক্রম চালিয়ে দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে আসছিলেন।”

তার বিরুদ্ধে ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে এই র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “হামিম অন্যের ক্রেডিট কার্ড হ্যাক করে বিট কয়েন কিনে এই অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার রাহুল সরকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়ালেখা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে হামিমের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে সে বিট কয়েন লেনদেনের সঙ্গে জড়িত হন। তারও বেশ কয়েকটি ‘ভার্চুয়াল ওয়ালেট’ রয়েছে।

গ্রেপ্তার সঞ্জীব দে ফরিদপুরের স্থানীয় একটি কলেজে পড়েন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের পর থেকে হামিম তাকে প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন লেনদেনে উদ্বুদ্ধ করেন। বিটকয়েনের একটি অ্যাকাউন্ট খুলে তিনি অর্থ লেনদেন করে আসছিলেন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, এদেশে বিট কয়েনের মাধ্যমে লেনদেন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। এটা এদেশে অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।