টাকা লোপাট: ঢাকা ব্যাংকের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে পৌনে চার কোটি টাকার বেশি লোপাটের ঘটনায় ব্যাংকটির দুই কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 June 2021, 04:23 PM
Updated : 19 June 2021, 05:27 PM

শনিবার কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আতিকুল আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন বলে সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপ-পরিচালক) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক জানিয়েছেন।

আসামিরা হলেন ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার সিনিয়র অফিসার ক্যাশ ইনচার্জ রিফাতুল হক এবং এফভিপি ও ম্যানেজার (অপারেশন) এমরান আহম্মেদ।

বর্তমান তারা কারাগারে আটক আছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকা ব্যাংকের বংশাল শাখার ভল্ট থেকে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা লোপাটের ঘটনা ধরা পড়লে রাতেই তাদের আটক করে পুলিশ।

শুক্রবার তাদের ঢাকার মুখ্য মহানগর মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ৫৪ ধারায় আটক দেখিয়ে কারাগারে রাখার আবেদন করেন বংশাল থানা পুলিশের এসআই প্রদীপ কুমার সরকার।

এই আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মাসুদুর রহমান তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

দুদক কর্মকর্তা আরিফ সাদেক বলেন, শনিবার এই মামলা দায়েরের অনুমোদন দিয়েছে দুদক।

মামলার এহাজারে বলা হয়, “আসামিগণ পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডের বংশাল শাখা, ঢাকার ভল্টে রক্ষিত টাকা হতে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।”

মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪০২/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন- ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আদালতে আবেদনে এসআই প্রদীপ উল্লেখ করেন, আসামিরা ব্যাংকের ভল্টের দায়িত্বে ছিলেন। ভল্টের চাবি তাদের কাছেই ছিল।

আসামিরা তাৎক্ষণিকভাবে টাকা আত্মসাতের কথা স্বীকার করেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

দুদুকের মামলায় বলা হয়েছে, ব্যাংকের বংশাল শাখার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিক বৃহস্পতিবার বাদী হয়ে রিফাতুল হক ও এমরান আহম্মেদের বিরুদ্ধে বংশাল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

রিফাতুল হক ২০১৮ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে বংশাল শাখায় সিনিয়র অফিসার ক্যাশ ইনচার্জ হিসাবে কর্মরত আছেন।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, “ঢাকা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের আইসিসি ডিভিশনের ইন্টারন্যাল অডিট অ্যান্ড ইন্সপেকশন ইউনিটের কর্মকর্তারা বার্ষিক নিরীক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ১৭ জুন ব্যাংকের বংশাল শাখা পরিদর্শনে যান এবং তাদের তদন্তে তাৎক্ষণিকভাবে শাখার ভল্টে ক্যাশ হিসাবে মোট তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ঘাটতি পাওয়া যায়।

“ঘাটতি টাকার বিষয়ে ক্যাশ ইনচার্জ রিফাতুল হককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ঘটনার বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করেন এবং লোভের বশবর্তী হয়ে তিনি গত বছর ২০ জুন থেকে চলতি বছের ১৬ জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় ও তারিখে অল্প অল্প করে উক্ত টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেছেন মর্মে স্বীকার করেন।”

ব্যাংকের অডিট দলের প্রাথমকি অনুসন্ধানের কথা উল্লেখ করে এজাহারে আরও বলা হয়, “আসামিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ভল্টে থাকা ১০০ টাকার নোটের গাইটের (১০০ টাকার নোটের ১০০ পিসের বান্ডিল) উভয় পার্শ্বে ৫০০ টাকার নোট দিয়ে ৫০০ টাকার গাইট তৈরি করে স্তপিকৃত করে রাখেন, যাতে প্রাথমিকভাবে দেখে মনে হয় তা ৫০০ টাকার নোটের গাইট।”

একইভাবে ৫০০ টাকার নোটের গাইটের দু’পাশে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে সেটিকে এক হাজার টাকার নোটের গাইটে রূপ দিয়ে ভল্টে রাখা হয়েছিল বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

ব্যাংকের ভল্টের একসেট চাবি এমরান আহম্মেদের কাছে থাকে এবং তিনি যৌথভাবে রিফাতুল হকের সঙ্গে ভল্টের রক্ষক হিসেবে কাজ করেন উল্লেখ করে এহাজারে আরও বলা হয়, “নিয়ম অনুযায়ী এমরান আহম্মেদ প্রতিদিনের ক্যাশ হিসাব সংরক্ষণ ও বুঝে নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি তা না করে অপর আসামি রিফাতুল হকের সঙ্গে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে ব্যাংকের ভল্টের তিন কোটি ৭৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।”

দুদকের এজাহারে আরও বলা হয়, নিরীক্ষা দলের পরিদর্শনে টাকা লোপাটের বিষয়টি ধরা পড়লে ওই দিনই শাখা ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিক বংশাল থানায় ওই দুই কর্মকর্তাকে সোপর্দ করে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিযোগটি থানায় এহাজার হিসেবে গ্রহণ না করে সাধারণ ডায়েরি- জিডি হিসেবে নিয়ে তা দুদকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

একই দিন আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।