মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত টাঙ্গাইল ও ঢাকার উত্তরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব বলছে, সাইফুল ও তার সহযোগীরা ‘রাজা-বাদশা’ গ্রুপ নামে এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন, তার একটি ওয়েবসাইটও ইন্টারনেটে আছে, কিন্তু সেখানে ওই গ্রুপের অফিসের যে ঠিকানা দেওয়া আছে, তার কোনো বাস্তাব অস্তিত্ব নেই।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সায়েন্টিস্ট সাইফুল (৫৪), সাইফুলের স্ত্রী বকুলি ইয়াসমিন (৪৬), সাইফুলের ছেলে মো. ইমরান রাজা (২৫), রাজার স্ত্রী কাকুলী আক্তার (১৯), সাইফুলের আরেক ছেলে মো. রোমান বাদশা (১৮), মো. আনিসুজ্জামান সিদ্দীকী (৫৩), মো. নাজমুল হক (৩০), মো. তারেক আজিজ (৪০), মো. বেল্লাল হোসেন (৬১), মো. আব্দুল মান্নান (৫০), মো. শিমুল মিয়া (২৪), মো. নুরনবী (৪৫), মো. আবুল হাশেম (৪২), মো. আলী হোসেন (৩৮), মো. শওকত আলী (৫০) এবং মো. রোকনুজ্জামান (৫০)।
অভিযানে তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড গুলি, দুই বোতল বিদেশি মদ, ছয়টি সিল, নগদ ৪৫ হাজার ৪৬০ টাকা, ২০টি মোবাইল ফোন, ১৪টি চেক বই, ১২টি ভিজিটিং কার্ড, ছয়টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চিঠি, বিভিন্ন দামের ১২১টি জাল স্ট্যাম্প, তিনটি চুক্তিনামার দলিল, তিনটি বই এবং নয়টি স্বাক্ষরিত চেক ও বিদেশি নেতাদের সাথে ভুয়া পত্রালাপের কপি উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ, মালদ্বীপসহ বিশ্বের অনেক দেশ পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। এই দুর্যোগ থেকে এসব দেশকে রক্ষা করতে একটি ফর্মুলা তৈরির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে চিঠি লিখেছেন রাজা বাদশা গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম। এসব চিঠির জবাব দিয়ে জলবায়ু প্রকল্পে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। এমনকি ইরাকের এক আইনজীবী তিন ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
“কিন্তু এসব টাকা দেশে আনতে জটিলতা তৈরি হওয়ার কিছু জায়গায় অনাকাঙ্ক্ষিত খরচ হচ্ছে। তাই এখন এই প্রকল্পে কেউ ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করলে এক কোটি টাকা ফেরত পাবে।
এমন অভিনব গল্প ফেঁদে ১০ বছর ধরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে এই চক্রের বিরুদ্ধে।"
কেবল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে প্রতিকারের ফর্মুলা নয়, পাওয়ার প্ল্যান্ট প্রজেক্ট, করোনাভাইরাস প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও অন্যান্য প্রজেক্ট বাস্তবায়নের নামেও সাইফুল কোটি কোটি টাকা ও জমি আত্মসাত করেছেন বলে র্যাবের ভাষ্য।
এই চক্রটি গত চার মাসে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান খন্দকার আল মঈন।
রাজা-বাদশা গ্রুপের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক পুত্রবধূ এই গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন।
ওয়েবসাইটে উত্তরার সোনারগাঁও জনপথ মোড়ের যে ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে এবং টাঙ্গাইলে রাজা-বাদশা টাওয়ারের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তার অস্তিত্ব নেই বলে জানিয়েছে র্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, টাঙ্গাইল থেকে স্নাতক পাস করা সাইফুল নিজেকে বিজ্ঞানী দাবি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন। দেশের বিভিন্ন থানায় তার নামে পাঁচটি প্রতারণার মামলাও রয়েছে।
গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।