রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের চলমান সঙ্কটের সমাধানে ‘দ্রুত, জরুরি ও কার্যকর’ পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2021, 08:52 AM
Updated : 16 June 2021, 11:32 AM

নিউ ইয়র্কে মঙ্গলবার ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি: সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের অবস্থা’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের ভার্চুয়াল আলোচনায় এই আহ্বান জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করি, জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী নিরাপত্তা পরিষদ তাদের দায়বদ্ধতা পরিপালন করবে এবং মিয়ানমার সমস্যার সমাধানে অনতিবিলম্বে ও জরুরিভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজভূমিতে নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফিরে যেতে পারে।”

জাতিসংঘে বাংলাদেশ, কানাডা, সৌদি আরব ও তুরস্কের স্থায়ী মিশন এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ যৌথভাবে এই আলোচনার আয়োজন করে।

উদ্বোধনী বক্তব্যে জাতিসংঘের চলতি সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকির তার সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন; মূল বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন।

তিনি এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের পাশাপাশি আঞ্চলিক সংস্থা ও দেশ এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে আমরা সবসময়ই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার আহ্বান জানিয়েছি। সমস্যার মূল কারণগুলি খুঁজে বের করে তা সমাধানের কথা বলেছি।

“বিশেষ করে তাদের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদে, নিরাপত্তার সাথে এবং মর্যাদাপূর্ণভাবে নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছি।”

রোহিঙ্গা সঙ্কেটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত ও উদারতার কথা তুলে ধরে মোমেন বলেন, “এই নীতি, আদর্শ ও উদারতাই সহিংসতার শিকার ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে মানবিক আশ্রয়দানে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছে। আমাদের সম্পদ ও স্থানের তীব্র সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছি।”

ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের আবাসন সুবিধার কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘রোহিঙ্গদের জন্য নতুন এই আবাসন ব্যবস্থা জাতিসংঘ এবং উন্নয়ন সহযোগীরা পরিদর্শন ও মূল্যায়ন করে সন্তোষ জানিয়েছে এবং সেখানে তাদের রোহিঙ্গা বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়ন শুরু করেছে।”

জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন।

অন্যদের মধ্যে জাতিসংঘে কানাডার স্থায়ী প্রতিনিধি বব রে, তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফেরিদুন হাদি সিনির লইয়োগ্লু, জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু নেদিরিতু, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ, জাতিসংঘে সৌদি আরবের উপ স্থায়ী প্রতিনিধি এবং রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী ও উইমেন পিস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক ওয়াই ওয়াই নু আলোচনায় অংশ নেন।

সঞ্চালনায় ছিলেন ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর রেসপনসিবিলিটি টু প্রটেক্ট’ এর নির্বাহী পরিচালক সায়মন অ্যাডাম।

আলোচকরা রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানে তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন। মিয়ানমারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে দায়বদ্ধতা নিরূপণের চলমান প্রক্রিয়ার প্রতি সমর্থন জানান তারা।

জাতিসংঘের বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি, নাগরিক সমান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য অংশীজনসহ বিপুলসংখ্যক অংশগ্রহণকারী ভার্চুয়াল এ আলোচনায় যোগ দেন।

সাধারণ পরিষদের সভাপতির সঙ্গে বৈঠক

মঙ্গলবার বিকালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ভলকান বজকিরের সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ এর টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার বিষয়ে কথা হয় তাদের।

মিয়ানমার নিয়ে বিশেষ সেশন আহ্বান করায় বজকিরকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্যও তাকে আমন্ত্রণ জানান।

সাধারণ পরিষদের সভাপতি রোহিঙ্গা সঙ্কটে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। জাতিসংঘ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তার দপ্তরকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, ভূ-বেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উচ্চ প্রতিনিধি ফেকিতামোয়াইলোয়া কাতোয়া উতইকামানুর সঙ্গেও বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তারা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর টেকসই উত্তরণ নিয়ে কথা বলেন।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে কাতারের দোহায় এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্তুতিমূলক কমিটির কো-চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশ অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে তাকে আশ্বস্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।