নাসির ও অমি মাদক মামলায় ৭ দিন রিমান্ডে

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদক আইনের মামলায় সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2021, 10:34 AM
Updated : 15 June 2021, 01:50 PM

বিমানবন্দর থানার এ মামলায় গ্রেপ্তার তিন নারী লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধাকেও তিন দিন করে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।

গোয়েন্দা পুলিশের করা রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসি মঙ্গলবার এই আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়, নাসির ও অমিকে দশ কার্যদিবসের মধ্যে এবং তিন নারী আসামিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রিমান্ডে নিতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে রিমান্ড বিষয়ে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে। আর নারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে নারী পুলিশের উপস্থিতিতে।

পরীমনি সোমবার সকালে সাভার থানায় ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে মামলা করার পর দুপুরে ঢাকার উত্তরার একটি বাসা থেকে এজাহারভুক্ত দুই আসামি নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় ওই বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথা জানায় গোয়েন্দা পুলিশ।    

ওই বাসা থেকে নাসির ও অমির সঙ্গে তিন নারীকেও গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের ‘যৌন কাজে’ সেখানে রাখা হয়েছিল বলে পুলিশের ভাষ্য।

পরে সোমবার মধ্যরাতে বিমানবন্দর থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের এসআই মানিক কুমার শিকদার।

গ্রেপ্তার পাঁচজনকে সেই মামলায় মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান জোনের পরিদর্শক উদয় কুমার মণ্ডল।

রিমান্ড শুনানিতে রাষ্ট্রেপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, সাজ্জাদুর রহমান শিহাব ও তাপস পাল।

আসামিদের পক্ষে রিমান্ডের বিরোধিতা করেন আইনজীবী এ এইচ  ইমরুল কাউছার, ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন, সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীসহ বেশ কয়েকজন।

আবদুল্লাহ আবু বলেন, “আসামি নাসির মাহমুদ ও অন্যরা মধুকুঞ্জ বানিয়ে আমোদ প্রমোদে ব্যস্ত থাকেন।  যে বাড়ি থেকে এইসব আলামত বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার হয়েছে সে বাড়িটা আসামিদের কারো নয়, ভাড়া করা বাড়ি। সরকার মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে, তারপরেও আসামিরা এগুলো ঘটিয়েছে। এরা  কথিত এলিট। ভদ্রতার মুখোশের আড়ালে তারা এসব অপকর্ম করে ।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ইমরুল কাউছার বলেন, “নাসির উদ্দিন মাহমুদ  ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। তার কাছ থেকে কোনো মাদকও উদ্ধার করা হয়নি। অথচ রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে নাসিরের দেখানো মতে ও নিজ হাতে বের করে দেওয়া মাদক আলামতগুলো উদ্ধার করা হয়।

“সোডা ওয়াটার কোনো নিষিদ্ধ দ্রব্য নয়। আর বিদেশি মদের খালি বোতল আমাদের সবার বাড়ির ফ্রিজে পানির বোতল হিসেবে ব্যবহার করা হয়।”

এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাজ্জাদুল হক শিহাব ‘না না’ করে বলে ওঠেন, “আমরা মদের বোতল পানির বোতল হিসাবে ব্যবহার করি না।”

আসামিপক্ষের আইনজীবী বাতেন বলেন, “নাসির  উদ্দিন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বিজ্ঞ আদালত অনেক সচেতন। এরা যদি পেশাগত অপরাধী হত, তবে তাদের বিরুদ্ধে এর আগে অভিযোগ, মামলা থাকত।”

অপর আইনজীবী হযরত আলী বলেন, “তার (নাসির) বয়স ৬৫। তার বয়স বিবেচনায় নিতে হবে। কথিত মূল ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এ মাদক মামলার উদ্ভব। পত্রিকায় যাই আসুক না কেন, প্রত্যেকের ন্যায়বিচার চাওয়ার অধিকার রয়েছে। তিনি প্রথম শ্রেণির করদাতা। সুতরাং তার রিমান্ড আবেদন নাকচ করা হোক। মান সন্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য তার বিরুদ্ধে মাদক মামলা সাজানো হয়েছে।”

শুনানির সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উৎসাহ নিয়ে আইনজীবীদের বক্তব্য শুনতে দেখা যায় আবাসন ব্যবসায়ী নাসিরকে, যিনি জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য।

মোটামুটি স্বাভাবিক দেখা গেলেও কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তাকে কোনো কথা বলতে দেখা যায়নি। বিচারকের সঙ্গেও তিনি কথা বলার চেষ্টা করেননি।

উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য (বিনোদন ও সংস্কৃতি)। আরেক আসামি তুহিন সিদ্দিকী অমিও ওই ক্লাবের সদস্য ছিলেন।

পরীমনি তার মামলায় অভিযোগ করেছেন, পূর্ব পরিচিত অমি গত ৮ জুন রাতে তাকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ বোট ক্লাবে নিয়ে যান এবং সেখানে নাসির তাকে ‘ধর্ষণের চেষ্টা’ করেন।

সাভার থানায় পরীমনির করা ওই মামলাতেও নাসির ও অমিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহিল কাফি জানিয়েছেন।

ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে ওই মামলায় সাভার থানা পুলিশকে আগামী ৮ জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত।

পরীমনি তার মামলায় নাসির ও অমি ছাড়াও আরও চারজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করেছেন। তবে নতুন করে আর কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।