এমন দিনেই কবিগুরু বলেছিলেন, “নীল নবঘনে আষাঢ়গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।”
আর প্রকৃতির এমন রূপে নজরুল গেয়ে উঠেছিলেন, “ছড়ায়ে বৃষ্টির বেলফুল, দুলায়ে মেঘলা চাঁচর চুল, চপল চোখে কাজল মেঘে আসিল কে?”
ষড়ঋতুর আবর্তে বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে বর্ষা। এ ঋতুকে বরণ করে নিতে প্রতিবছর আষাঢ়ের প্রথম দিন নগরবাসী মাতে উৎসব। তবে এবার করোনাভাইরাস মহামারীতে আষাঢ় এসেছে ভিন্ন আবহে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আঙ্গিনা কিংবা শিল্পকলা একাডেমির পরিবর্তে এবার পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার দীননাথ সেন সড়কের ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত গ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে সীমিত পরসিরে আয়োজন করা হয় বর্ষা উৎসবের। বরাবরের মতই এ উৎসবের আয়োজন করেছে বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদ।
গানের সুরে, কবিতার ছন্দে আর নাচের তালে তালে আষাঢ়ের বৃষ্টিতে ভিজে বর্ষার আবাহন করেছেন সংস্কৃতিপ্রেমীরা।
মহাদেব ঘোষের কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো, দোলে মন দোলে অকারণ হরষে’ গানটি দর্শক-শ্রোতাদেন হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে আবেগের অনুরণন।
শিল্পী বিজন চন্দ্ৰ মিস্ত্রি গেয়ে শোনান নজরুলের ‘বরষা ঐ এলো বরষা’ গানটি। কানন বালা সরকার, নবনীতা জাহিদ চৌধুরী এবং শ্রাবণী গুহ রায় শোনান বর্ষা বন্দনার বিভিন্ন গান।
দলীয় সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি,স্পন্দন ও সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন, ও আহসান উল্লাহ তমাল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজর চৌধুরী সুইট।
সমাপনীর আগে ‘বর্ষা কথনে’ পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী বলেন, “ আজকে আমরা মহামারীর এক কঠিন সময়ে বর্ষা মঙ্গলের উৎসব করছি। আসলে আমরা বাঙালি, আমরা কখনো হারি না। আমরা যেমনি আমাদের ভাষার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লড়াই করে প্রাণ দিতে পারি, তেমনি অদৃশ্য শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমরা আমাদের সংস্কৃতির চর্চা করতে পারি।”
শেকড়ের সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে এই মহামারীকালেও বর্ষা উৎসবে আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান মানজর চৌধুরী সুইট।
তিনি বলেন, “বর্ষা মানেই বাঙালির আবেগ, অনুভূতির জোয়ার। বর্ষা বরণকে কেন্দ্র করে এই আয়োজনটি আমরা গত ১৪ বছর ধরে করে আসছি। আমরা এই আয়োজনটি প্রতি বছর ঢাকার কেন্দ্রে তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা শিল্পকলা একাডেমিতে করতাম। কিন্তু অতিমারীর কারণে সেখানে অনুমতি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
“আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমরা সীমিত পরসিরে এবার আয়োজন করেছি। আশা করি, আগামী দিনে একটি সুন্দর প্রকৃতিতে সবাইকে নিয়ে আমাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারব।”