ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ‘কালো ছত্রাকে’ আক্রান্ত রোগী

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কালো ছত্রাকে আক্রান্ত এক ব্যক্তি চিকিৎসা নিচ্ছেন, যিনি কিছু দিন আগে করোনাভাইরাস থেকে সেরে উঠেছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 04:33 PM
Updated : 28 July 2021, 02:57 PM

গত সপ্তাহে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর শনিবার হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি বর্তমানে সুস্থ আছেন।

৪৫ বছর বয়সী ওই পুরুষ রোগীর বাড়ি খুলনায়।

এক মাস আগে ওই রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. ফরহাদ উদ্দিন হাসান চৌধুরী মারুফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কোভিড-১৯ পরবর্তী জটিলতা নিয়ে এক সপ্তাহ আগে এই রোগী মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হন।

“তার মাথাব্যথা, সাইনোসাইটিস ও ডানচোখে দেখতে সমস্যা হচ্ছিল। নাক দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিল। মুখের এক পাশ ফুলে ওঠে।”

রোগীর উপসর্গ থেকে কালো ছত্রাক সন্দেহে তার চিকিৎসা শুরু হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “পরে নাক-কান ও গলা বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে অপারেশন করে ফাঙ্গাস রিমুভ করা হয়।

“ওই রোগীর হিস্টোপ্যাথলজি, মাইক্রোস্কপি আর কালচার তিনটাতেই মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস শনাক্ত হয়।”

ওই রোগীর অবস্থা এখন স্থিতিশীল উল্লেখ করে ডা. ফরহাদ বলেন, “উনার অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। তবে তিনি ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।”

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহরিয়ার আরাফাত সৌরভ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আক্রান্ত ব্যক্তির নাক, মুখ চোখ ছাড়াও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়েছিল।

“ব্রেইনে, চোখে থাকা ফাঙ্গাস আমরা অপসারণ করেছি। সার্জারির পর উনার অবস্থা আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এখন উনাকে অ্যান্টিফাংগাল দেওয়া হয়েছে। এটা যদি পুরো কোর্স কমপ্লিট করা হয় আশা করছি তিনি সু্স্থ উঠবেন।”

এর আগে বাংলাদেশে গত ২৫ মে ‘কালো ছত্রাকে’ আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের কথা জানায় বারডেম হাসপাতাল।

ওই ব্যক্তিও কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছিলেন।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে আতঙ্ক ছড়ায় কালো ছত্রাক বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস হিসেবে পরিচিত ‘মিউকরমাইকোসিস’।

দেশটিতে সুস্থ হয়ে ওঠা কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে ‘কালো ছত্রাকের’ সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।

বিরল এই সংক্রমণে মৃত্যু হার ৫০ শতাংশের মতো। অনেক সময় আক্রান্তের প্রাণরক্ষায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখ বা চোয়ালের হাড় অপসারণ করতে হয়।

যাদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঘটেছে, তাদের মাথা ব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক দিয়ে রক্তা পড়া, মুখের একপাশ ফুলে যওয়া, চোখ ফুলে যাওয়া বা চোখে ব্যথা করা, চোখের পাপড়ি ঝরে পড়া, ঝাপসা দেখা এবং এক সময় দৃষ্টি হারানোর মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

কারও কারও ক্ষেত্রে নাকের পাশপাশে চামড়ায় কালচে দাগ দেখা দিতে পারে।

এই ছত্রাক সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে আক্রমণ করে। ডায়াবেটিস, এইডস বা ক্যান্সারে যারা আক্রান্ত, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দারুণভাবে দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে এ সংক্রমণ প্রাণঘাতি হয়ে উঠতে পারে।