পরীমনির মামলার প্রধান আসামি কে এই নাসির মাহমুদ

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠার পর আলোচনায় এখন নাসির উদ্দিন মাহমুদের নাম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকগোলাম মর্তুজাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2021, 03:36 PM
Updated : 14 June 2021, 07:35 PM

উত্তরা ক্লাবের সাবেক সভাপতি হিসেবে নাসির মাহমুদের সীমিত গণ্ডিতে পরিচিতি থাকলেও এখন অনুসন্ধানে তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতাও বেরিয়ে এসেছে।

আবাসন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেওয়া নাসির জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য।

পরীমনি অভিযোগ করেছেন, গত ৮ জুন উত্তরার কাছের বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালিয়েছিলেন নাসির। তখন তাকে মারধরও করা হয়।

তবে এই অভিনেত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাসির। তিনি বলছেন, ক্লাবে সেদিন পরীমনি জোর করে দামি মদ নিতে গেলে বাধা দিয়েছিলেন তিনি, তাতে এই অভিনেত্রী উত্তেজিত হয়ে তাকেও আক্রমণ করেছিলেন। পরে নিরাপত্তা রক্ষীরা এসে তাকে বের করে দেয়।

নাসির মাহমুদ ঢাকা বোট ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। ক্লাবটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

পরীমনি অভিযোগ তোলার পর সোমবারই জরুরি এক সভা ডেকে নাসিরকে বহিষ্কার করা হয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা বোট ক্লাবের সভাপতি, পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে এসে চিত্রনায়িকা পরীমনি অভিযোগ করেন, তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেছেন এক ব্যবসায়ী। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

নিজের ফেইসবুক পাতায় নাসির মাহমুদের পরিচয় দেওয়া রয়েছে কুঞ্জ ডেভেলপারস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং মাহমুদ বিল্ডার্স অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

কুঞ্জ ডেভেলপারসের ওয়েবসাইটে নাসিরের ছবিসহ একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও দেওয়া ছিল, যা সোমবার পরীমনির মামলা হওয়ার পর সরিয়ে ফেলা হয়। তবে ওয়েবক্যাশে এখনও তথ্যগুলো রয়েছে।

ওয়েবসাইটের তথ্যে বলা হয়েছে, ২০১৫ সাল থেকে তিন বছর উত্তরা ক্লাবের সভাপতি ছিলেন নাসির। বাংলাদেশ অ্যাসেসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) নির্বাহী কমিটিতেও ছিলেন এক সময়।

লায়ন্স ক্লাবে যুক্ত থাকার কথাও লিখেছেন নাসির। তিনি বলেছেন, ঢাকার প্রথম বিভাগ ফুটবল লিগে খেলার অভিজ্ঞতাও তার রয়েছে।

ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১৯৮১-৮২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার সময় এস এম হল ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন নাসির।

এখন তিনি জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলেও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব তথ্যের অনেকগুলোই তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করা সম্ভবপর হয়নি।

তবে নাসির জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বলে স্বীকার করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নাসির উত্তরা ক্লাবের তিন বারের সভাপতি ছিলেন। আমি নিজেও উত্তরা ক্লাবের সদস্য। উনি (নাসির) দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার এখন।

“জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। এবারের কাউন্সিলে আমাদের কাছে সক্রিয় রাজনীতি করবেন এ ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সে হিসেবে তাকে প্রেসিডিয়াম মেম্বার করা হয়।”

তবে যে অভিযোগ এখন এসেছে নাসিরের বিরুদ্ধে, সে বিষয়ে আগে কোনো আভাস পাননি বলে জানান জি এম কাদের।

“তার বিষয়ে আলোচিত এ ধরনের ঘটনার মতো নেতিবাচক কোনো ঘটনা আগে ঘটেনি। তারপরও দলের জ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

পরীমনি রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে নাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। সোমবার তিনি সাভার থানায় মামলা করেন।

এরপর বিকালে পুলিশ উত্তরার এক নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে নাসির মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমিসহ আরও তিন নারীকে গ্রেপ্তার করে।

ওই বাসা থেকে মদ ও ইয়াবা উদ্ধারের কথাও জানানো হয়।

গ্রেপ্তারের পর ডিবি কার্যালয়ে ঢাকা বোট ক্লাবের সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদ (জিন্স প্যান্ট ও আকাশি রঙের শার্ট পরা)। সোমবার উত্তরা থেকে তার সঙ্গে আরও চারজনকে গ্রেপ্তার ও কিছু মদ জব্দ করেছে পুলিশ। ধর্ষণচেষ্টা, হত্যাচেষ্টার অভিযোগে চিত্রনায়িকা পরীমনির করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযান শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার হারুন উর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, “যাদেরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তাদের কাজই মদের ব্যবসা করা।

“তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ যে সে ছোট ছোট মেয়েদের রক্ষিতা রাখেন, মদের ব্যবসা করেন। আমরা তদন্ত করছি, এ ধরনের অভিযোগ সত্য কি না। অভিযান চালিয়েছি, মাদক ও ইল্যিগ্যাল আইটেম পেয়েছি।”

পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেও নাসিরের বিরুদ্ধে আরও দুটি মামলা হচ্ছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।

ডিবির উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে মাদকের একটি মামলা হবে। এছাড়া আটক তিন নারী যদি রাজি হন তবে, তাদের যৌন কাজে বাধ্য করার অভিযোগেও আরেকটি মামলা হবে।

নাসির সোমবার রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়েই থাকছেন। মঙ্গলবার তাকে আদালতে পাঠানো হবে বলে ঢাকা জেলার পুলিশের অতিরিক্ত সুপার আব্দুল্লাহিল কাফী জানিয়েছেন।