মনজিলকে হত্যায় ‘একাট্টা হয়েছিলেন’ চাচা, সৎ মায়ের পরিবার: সিআইডি

হত্যা পরিকল্পনায় ‘অংশ নেওয়া’ চাচা হয়েছেন মামলার বাদী; সৎ মা আর মামাও ছিলেন ‘পরিকল্পনায়’। ভাড়াটে খুনি নিয়ে হত্যার সময় ‘উপস্থিত ছিলেন’ সৎ ভাই। বাড্ডার আফতাব নগরে মনজিল হক হত্যার তিন বছর পর এসব তথ্য উদঘাটন করার কথা জানিয়েছে সিআইডি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2021, 04:15 PM
Updated : 13 June 2021, 04:15 PM

রোববার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগরের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক শেখ ওমর ফারুক এসব তথ্য তুলে ধরেন।

২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর আফতাব নগরে নিজের বাসায় খুন হন মনজিল হক। তার সৎ ভাই ইয়াসিন হক সেদিনই নিখোঁজ হয়েছিলেন।

ওই ঘটনায় চাচা ফারুক মিয়া বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ২০১৮ সালের ২৪ মার্চ সিআইডি মামলার তদন্তভার নেয়।

অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ওমর ফারুক জানান, তদন্তে নেমে ইয়াসিনের সন্ধান করতে থাকে সিআইডি। অবশেষে গত ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের শেরশাহ কলোনীতে ‘আত্মগোপনে থাকা’ ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয় ‘ভাড়াটে তিন খুনি’- রবিউল ইসলাম সিয়াম, মাহফুজুল ইসলাম রাকিব ও সীমান্ত হাসান তাকবীরকে।

তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে মনজিল হত্যায় ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া বিভিন্ন আলামতের ডিএনএ প্রোফাইলের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। তারা প্রত্যেকে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলেও সিআইডির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

ওমর ফারুক বলেন, ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে, মামলার বাদী চাচা ফারুক মিয়া নিজেও ‘জড়িত’ ছিলেন হত্যা পরিকল্পনায়। নিখোঁজ ইয়াসিনের সন্ধান চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করার ‘নাটতেও’ তিনি ছিলেন।

“মনজিল তার বাবার মৃত্যুর পর মৃত মায়ের স্বর্ণালঙ্কার ফেরত চেয়েছিল সৎ মা লায়লা ইয়াসমিন লিপির কাছে। লিপি মনজিলকে বলেছিলেন, স্বর্ণালঙ্কার তার ভাই আবু ইউসুফ নয়নের কাছে আছে। নয়ন গয়না ফেরত দিতে না চাইলে তাকে লাঞ্ছিত করেন মনজিল। মূলত এরপরই শুরু হয় মনজিল হত্যার পরিকল্পনা।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইয়াসিন তার সৎ ভাই মনজিলকে ‘হত্যার জন্য’ মামার সঙ্গে পরামর্শ করলে তাতে সম্মতি দেন নয়ন। এ কাজে খরচ করার জন্য ইয়াসিনকে ২০ হাজার টাকাও দেন নয়ন। হত্যা পরিকল্পনায় যোগ দেন চাচা ফারুকও।

অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ওমর ফারুক বলেন, একটি ফ্ল্যাট বিক্রির টাকা নিয়ে মনজিল ও তার বাবা মইনুল হক ওরফে মনার সঙ্গে ফারুক মিয়ার বিরোধ ছিল।

মনজিল, ইয়াসিন এবং ফারুক মিয়ার ছেলে একেএম নেওয়াজের নামে শান্তিনগর বাজারের পেছনে একটি ফ্ল্যাট ছিল। এক সময় মনজিলের বাবা ফ্ল্যাটটি ইয়াসিন ও মনজিলকে দিয়ে দলিল করিয়ে গোপনে বিক্রি করে দেন।

“ভাই ফারুক মিয়া ফ্ল্যাট বিক্রিতে ছেলের টাকার ভাগ চাইলে মনজিল ও মনজিলের বাবা তাকে ‘মাদকাসক্ত’ বলে প্রচার করেন। এক পর্যায়ে বাড্ডার একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ২ মাস ২১ দিন আটকে রাখা হয় তাকে। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন ফারুক।”

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী মনজিলকে হত্যার জন্য মা ইয়াসমিন লিপি, মামা আবু ইউসুফ ও চাচা ফারুক মিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে ৫ লাখ টাকায় তিন খুনিকে ভাড়া করে ইয়াসিন।

হত্যার আগের রাতে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভাড়াটে ৩ খুনি ইয়াসিনের বনশ্রীর ফ্ল্যাটে ছিলেন। পরদিন সকালে আফতাব নগরের বাসায় ঢুকে ইয়াসিনের উপস্থিতিতে তিন ভাড়াটে খুনি মনজিলকে গলা কেটে হত্যা করে বলে সিআইডির ভাষ্য।  

তদন্ত কার্যক্রম চলার সময় মামলার বাদী প্রথম থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করে ‘চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রভাবিত করে আসছিলেন’ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, ‘অজ্ঞাত খুনিরা’ নিখোঁজ ইয়াসিনকে অপহরণ করে ‘হত্যার পর লাশ গুম করেছে’ দাবি করে সিআইডিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন মনজিলের চাচা।