দেশে আড়াই মাসে বজ্রপাতে ১৭৭ মৃত্যু

জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আড়াই মাসে দেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে; এর মধ্যে জুনের প্রথম সপ্তাহেই মারা গেছেন ৬৫ জন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2021, 04:15 PM
Updated : 11 June 2021, 04:36 PM

দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালের খবর এবং টেলিভিশনে প্রচারিত তথ্য পর্যালোচনা করে বজ্রপাতে মৃত্যুর এ তথ্য সঙ্কলন করেছে সেইভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম।

শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে ফোরামের পক্ষ থেকে বজ্রপাতে হতাহতের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়।

সেখানে জানানো হয়, চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না থাকলেও মার্চ মাসের শেষের দিন থেকে মৃত্যুর ঘটনা শুরু হয়।

এর পর থেকে চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মারা যান ১৭৭ জন। তাদের মধ্যে ১২২ জন বজ্রপাতের সময় ফসলের মাঠে কৃষি কাজে নিয়োজিত ছিলেন। এই সময়ে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন আরও ৪৭ জন।

চলতি বছর বজ্রপাতে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ১৪৯ জন পুরুষ এবং ২৮ জন নারী। বয়সীশ্রেণির হিসাবে নিহতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ১৩ জন, কিশোর ৬ জন ও কিশোরী ৩ জন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কালবৈশাখী ঝড়ের মধ্যে আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছেন ১৫ জন। ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে ঘরে বাজ পড়ে। নৌকায় মাছ ধরার সময় ৬ জন, মাঠে গরু আনতে গিয়ে ৫ জন, মাঠে খেলার সময় ৩ জন এবং বাড়ির আঙিনায় খেলার সময় ৬ জন মারা গেছে বজ্রপাতে।

এছাড়া ভ্যান বা রিকশা চালানোর সময় ২ জন এবং গাড়ির ভেতরে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এবছর বজ্রপাতের ‘হট স্পট’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। এই জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছেন ১৮ জন।

এছাড়া মার্চ থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোণায় ১৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ জন এবং চট্টগ্রামে ১০ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন।

বজ্রপাতে মৃত্যু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে বেশ কিছু সুপারিশকও তুলে ধরা হয়েছে সেইভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সংবাদ সম্মেলনে।

ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়, কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হতে পারে ১৫ মিনিট আগেই তা জানতে পারে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তা মোবাইল ফোনে অ্যালার্ট আকারে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষকে জানানোর ব্যবস্থা করলে হতাহতের ঝুঁকি কমবে।

সরকার বজ্রপাতকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘোষণা করলেও এই খাতে বরাদ্দ কম। মানুষের জীবন রক্ষায় এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, যাতে গবেষণা ও পূর্বাভাস উন্নত করা যায়।

মাঠ, হাওর, বাওর বা ফাঁকা কৃষি কাজের এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে, যার উপরে বজ্র নিরোধক থাকবে। বজ্রপাতের সময় কৃষকরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন।  

বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সকল পণ্যে শুল্ক মওকুফ, বাড়িতে বাড়িতে বজ্র নিরোধক স্থাপনের জন্য সরকারিভাবে নির্দেশনা জারি, বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা বা থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন না করারও সুপারিশ করেছে ফোরাম।