জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধেও ভূমিকা রাখবে মডেল মসজিদ, আশা প্রধানমন্ত্রীর

সারা দেশে গড়ে তোলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলো ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2021, 06:37 AM
Updated : 10 June 2021, 10:19 AM

তিনি বলেছেন, ইসলামের ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধের প্রচার এবং উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের ‘প্রকৃত মর্মবাণী’ প্রচার করার লক্ষ্যেই দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা শহরে একটি করে মোট ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের এই প্রকল্প সরকার নিয়েছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব মসজিদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, “ইসলামের প্রচার, প্রসারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ  ‍মুজিবর রহমান কাজ করে গেছেন। ইসলামের প্রচারের জন্য জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ইসলামের মূল প্রতিপাদ্য মানুষ যেন জানতে পারে, ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধি, ইসলাম প্রচার যেন হয় সেই চেষ্টাই আমরা করছি।

“ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ভূমিকা রাখার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাস ও নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে এসব মসজিদ ভূমিকা রাখবে।”

প্রকল্প পরিচালক মো. নজিবুর রহমান বলেন, “এটাই হচ্ছে বিশ্বে প্রথম কোনো সরকারের একই সময়ে একসঙ্গে এত বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণের ঘটনা, যা বিশ্বে বিরল।”

সারা দেশে মডেল মসজিদ ও সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আগামী অর্থবছরের মধ্যে আরো ১০০ মডেল মসজিদ চালু করা যাবে।

এ পর্যন্ত প্রকল্পের মোট কাজের ৩৬ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আগামী দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প নেওয়া হয়।

প্রকল্পের বিবরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানিয়েছিলেন, ৪০ থেকে ৪৩ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে এসব মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।

এ-ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এসব মসজিদের প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার।

বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার।

নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এসব মডেল মসজিদে রয়েছে একটি করে মিনার।

সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোকে দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিচতলা ফাঁকা থাকবে।

আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন এসব মসজিদের প্রতিটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। সারা দেশে নির্মাণাধীন এসব মসজিদের ভৌত অবকাঠামো গণপূর্ত অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১২ শ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯ শ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে।

যা থাকছে

এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজের জায়গা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামী বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি রাখার জায়গা রাখা হয়েছে।

সারা দেশে এসব মসজিদে প্রতিদিন চার লাখ ৯৪ হাজার ২০০ জন পুরুষ এবং ৩১ হাজার ৪০০ জন নারী একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারবেন। একসঙ্গে প্রায় ৩৪ হাজার মানুষ কোরআন তেলাওয়াত করতে পারবেন, ৬ হাজার ৮০০ জন ইসলামিক বিষয়ে গবেষণা করতে পারবেন, ৫৬ হাজার মানুষ দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারবেন এবং প্রতি বছর এখান থেকে ১৪ হাজার কোরআনে হাফেজ হবেন।

প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার নজিবুর বলেন, “মডেল মসজিদগুলো শুধু নামাজ পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখানে ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি জ্ঞান অর্জন ও গবেষণার সুযোগ থাকবে, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।”