মহামারীতেও স্বাস্থ্যে নিয়োগ বাণিজ্য: টিআইবির গবেষণায় তথ্য

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকে অর্থ ব্যয়ে দুর্নীতি, স্বাস্থ্যে জনবল নিয়োগে লেনদেন বাণিজ্যও অব্যাহত রয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 June 2021, 09:49 AM
Updated : 8 June 2021, 09:49 AM

এছাড়া সঙ্কট মোকাবেলায় সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাবের বিষয়টিও এসেছে গবেষণায়।

‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ র্শীষক গবষেণা প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল আয়োজনে প্রকাশ করা হয়।

গবেষণাপত্র উপস্থাপন করে টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন বলেন, “করোনা সংক্রমণের এক বছর তিন মাস অতিবাহিত হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা যায়নি। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। ৩০০ আইসিইউ শয্যা, ১৬৬টি ভেন্টিলেটর ও ৩৩৫টি হাই ফ্লো নেইজল ক্যানুলা ব্যবহার হচ্ছে না।”

প্রতিবেদনের তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবেলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে। পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২ কোটি তিন লাখ টাকা ব্যয় হলেও তাতে পাঁচ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার অপেক্ষায় অনেকে। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চলাকালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

এছাড়া টিকার প্রাপ্তি, মজুদ ও টিকাদানের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত বলেও জানান তিনি।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়ের গুণগত ও পরিমাণগত তথ্য করে এই গবেষণা করা হয় বলে জানায় টিআইবি।

আট বিভাগের ৪৩টি জেলা থেকে ৫৯টি টিকাদান কেন্দ্র নির্বাচন করে দৈবচয়নের ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করে এই গবেষণা করা হয়েছে।

জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অন্যান্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, টিকাদান সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেও তথ্য নেওয়া হয়েছে গবেষণায়।

অনিয়ম নয়, তথ্য নিয়ন্ত্রণে বেশি তৎপর সরকার: ইফতেখারুজ্জামান

অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা গত দেড় বছর স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির যে চিত্র দেখছি, সেগুলো যে অব্যাহত ছিল এখানে (গবেষণা জরিপে) দেখেছি। বিভিন্ন ক্রয় নীতি লঙ্ঘিত হয়েছে, জনবল নিয়োগে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

“দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। উপযোগিতা নিশ্চিত না করে কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য সাময়িকভাবে হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। পরে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোটি কোটি টাকা সরকারের ক্ষতি হয়েছে, জনগণের ক্ষতি হয়েছে।”

তিনি বলেন, “অন্যদিকে দেখেছি, তথ্য প্রকাশের প্রতিবন্ধকতা সরকার কোভিড শুরু হওয়া থেকেই শুরু করেছে। সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। সত্যিকার অর্থে তথ্য নিয়ন্ত্রণের যে প্রবণতা তা আরও ঘণীভূত হয়েছে। তার কিছু দৃষ্টান্ত আমরা দেখেছি, ব্যাপকভাবে আলোচিত ঘটনা যেটি রোজিনা ইসলামসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় বুধবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করাতে আসা মানুষের ভিড়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

“আমাদের বিবেচনায় সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে যতটা না তৎপর তার তুলনায় শতগুণে বেশি তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে। যেটি আমি মনে করি আত্মঘাতি একটি ব্যবস্থা। এটা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।”

সরকার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো কৌশল হয়নি বলেও মন্তব্য করেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক।

“সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। সেই বিষয়ে এখন পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কোনো রূপরেখা নেই যে কীভাবে এই টিকা সংগ্রহ করবে এবং তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

“আমরা দেখেছি সকলের জন্য প্রবেশগম্য উপায়ে টিকাদান কার্যক্রম নিশ্চিত করা যায়নি। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অনেকেই পেছনে রয়েছে। টিকা নিবন্ধন কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা সুবিধা বঞ্চিত মানুষের প্রতিকূলে হওয়ার কারণে এলাকা ও পেশা ভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা সর্বজনিন টিকাদানের যে অঙ্গিকার তা বিপন্ন করেছে।”