কার্টুনিস্ট কিশোরের ওপর নির্যাতনের ‘চিহ্ন পায়নি’ মেডিকেল বোর্ড

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোরের ওপর নির্যাতনের ‘কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি’ বলে আদালতকে জানিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন চিকিৎসকের মেডিকেল বোর্ড।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2021, 11:46 AM
Updated : 6 June 2021, 12:36 PM

তবে মেডিকেল বোর্ড তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এ বিষয়ে ‘চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হতে এবং পরবর্তী মূল্যায়নের জন্য’ আরও তদন্ত প্রয়োজন আছে।

ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল ওই প্রতিবেদন জমা পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও বিস্তারিত কথা বলতে চাননি।

আদালতের নির্দেশে গত  গত ২০ মার্চ গঠিত এ বোর্ডে নাক, কান গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমীর নেতৃত্বে আরও ছিলেন অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফকরুল আমিন খান এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক হাফিজ সরদার। প্রতিবেদনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। ওইভাবে এখন বলতে পারব না। তবে সিগনিফিকেন্ট কিছু পাওয়া যায়নি।”

কিশোরের বড় ভাই আহসান কবীর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচারক আদালতে কিশোরকে বসতে দিয়েছিলেন, কারণ ও খুবই অসুস্থ ছিল। তাছাড়া কিশোরকে যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বোর্ডের কাছে নেওয়া হল, তখনও ওর হাতে ক্যানুলা ছিল।

“কিশোরের চোখে ও কানে দুটি বড় অপারেশন করা হয়েছে। এখনও সে ঠিকমত হাঁটতে পারছে না। যদি এরকম প্রতিবেদন দিয়ে থাকে, তাহলে কি বলব! বিষয়টি দুঃখজনক।”

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় নয় মাস কারাগারে থাকার পর গত ৪ মার্চ জামিনে মুক্তি পান কিশোর। পরে ২০১৩ সালের নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে আদালতে একটি মামলার আবেদন করেন তিনি, যেখানে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের’ অভিযোগ আনা হয়।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েশ পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।

সেইসঙ্গে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কিশোরের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে ২৪ কর্মঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক।

কিশোরের শারীরিক পরীক্ষা শেষে মেডিকেল বোর্ড  গত ২০ মার্চ আদালতের সংশ্লষ্ট শাখায় প্রতিবেদন জমা মহামারীর মধ্যে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তা আর উপস্থাপন করা হয়নি।

আইনজীবী তাপস কুমার পাল বলেন, “আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হলে প্রতিবেদনটি বিচারকের সামনে উপস্থাপন করা হবে। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেবেন।”

মেডিকেল রিপোর্ট দেওয়া হলেও পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আদালতে জমা পড়েনি।

মামলার আবেদনে কিশোর অভিযোগ করেছেন, গত বছরের ৫ মে রমনা থানার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কিন্তু তারও তিন দিন আগে ২ মে সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সাধারণ পোশাকের ১৬-১৭ জন লোক কাকরাইলের বাসা থেকে তাকে ‘জোর করে হাতকড়া ও মুখে মুখোশ পরিয়ে অজ্ঞাত এক নির্জন জায়গায়’ নিয়ে যায়।

সেখানে ২ মে থেকে ৪ মে তার ওপর ‘শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার’ চালানো হয় বলে অভিযোগ করে কিশোর বলেছেন, তার কানে ‘প্রচণ্ড জোরে থাপ্পর মারা হয়’, কিছু সময়ের জন্য বোধশক্তিহীন হয়ে পড়েন তিনি। পরে তিনি বুঝতে পারেন, কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। ‘স্টিলের পাত বসানো’ লাঠি দিয়ে তাকে ‘পেটানো’ হয়। যন্ত্রণা ও ব্যথায় তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন।

আর্জিতে তিনি বলেছেন, পরে তিনি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান। সেখানে তার সঙ্গে লেখক মুশতাক আহমেদের দেখা হয়। মুশতাকের সঙ্গে আলাপ করে জানতে পারেন, মুশতাককে ‘বৈদ্যুতিক শক’ দেওয়া হয়ছে।

৬ মে রমনা থানায় হস্তান্তর করার পর ‘সরকারবিরোধী প্রচার ও গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয় তাদের বিরুদ্ধে।

মুশতাক আহমেদ বন্দি অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান, যা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিনে কিশোর কারাগার থেকে ছাড়া পান।

জামিনের মুক্তির পর গত ১৩ মার্চ কার্টুনিস্ট কিশোরের ডান কানে টিমপ্যানিক মেমব্রেন রিপেয়ার মিরিংগোপ্লাসটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি যন্ত্র বসানো হয়।