অন্য সময় বাজেট পেশের দিনটিতে সংসদ ভবন জুড়ে থাকে উৎসবের আমেজ। কিন্তু বৃহস্পতিবারের চিত্র ছিল ভিন্ন। সংসদ ভবন এলাকায় প্রবেশে ছিলো কড়াকড়ি। আর মূল ভবনে স্বল্প সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দায়িত্ব পালন করেছেন।
অধিবেশনেও চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ দেখা যায়নি। বরং সর্বত্র ছিলো কঠোর সতর্কতা। সংক্রমণ এড়াতে জনসমাগম ছিল নিয়ন্ত্রিত।
বাজেট উপস্থাপনের সময় সংসদ অধিবেশন কক্ষ অন্যসময় পূর্ণ থাকে। তবে বৃহস্পতিবার সংসদে ছিলেন ১৭০ জনের মত আইনপ্রণেতা। অবশ্য গতবছর উপস্থিতি ছিল আরও কম, ৭৮ জন।
সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “কোভিড-১৯ পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়া ১৩৬ জন সংসদ সদস্যের অধিবেশনে থাকার কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা প্রায় ১৭০ এর মত দাঁড়ায়।”
অতীতে অর্থমন্ত্রীর তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টার মত বাজেট বক্তব্য দেওয়া রেকর্ড থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত কারণে এবার সংক্ষিপ্ত পরিসরে বাজেট উপস্থাপন করা হয়।
বুধবার শুরু হয় সংসদের এই ত্রয়োদশ অধিবেশন। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার বেলা ৩ টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। তবে ছিলেন না বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ। জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্যদের আগে থেকেই অধিবেশনে আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। তকে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য অধিবেশনে ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল গতবছর বাজেট বক্তৃতা দিতে সময় নিয়েছিলেন ৪৭ মিনিট। এবার এক ঘণ্টার বেশি সময় বাজেট উপস্থাপন করা হলেও নিজে পাঠ করেছেন সব মিলিয়ে ১৫ মিনিটের মত।
বাকি সময় পাওয়ার পয়েন্ট এবং অডিও-ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনায় তার বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের সময় সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি আর মুজিব কোট পরিহিত অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল বাদামী রঙের ব্রিফকেস; যাতে নতুন অর্থবছরের বাজেটের নথিপত্র।
প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল অফহোয়াইট জামদানি। মুখে ছিল গোলাপি রঙের মাস্ক। অর্থমন্ত্রী সার্জিক্যাল মাস্ক পরে এসেছিলেন।
আগামী ২৯ জুন অর্থ বিল পাস হবে। আর বাজেট পাস হবে ৩০ জুন। এর আগে আগামী রোববার থেকে বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
সংসদ ভবনের প্রবেশমুখে সকলকেই ‘জীবাণুমুক্তকরণ’ চেম্বারের ভেতর দিয়ে ঢুকতে হয়েছে। মাপা হয়েছে সকলের তাপমাত্রা।
অধিবেশন কক্ষে এক থেকে দুটি আসন খালি রেখে বসেছিলেন সাংসদরা। অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল। সংসদ পরিচালনায় দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন।
স্বাভাবিক সময়ে বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকলেও গতবারের মত এবার কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সংসদ গ্যালারিতে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার ছিল না। তবে তাদের সাংবাদিক লাউঞ্জে বসার অনুমতি ছিল। সেজন্য থাকতে হয়েছে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বরাবরের মতই সংসদে উপস্থিত থেকে বাজেট পেশ প্রত্যক্ষ করেন। তবে সংসদ ভবনে তার প্রবেশের সময় কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছিল না।
অধিবেশন শুরুর আগে প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাক্ষর করেন তিনি। দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ওই বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়।
মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে সময় অনেকে উপস্থিত থাকলেও এবার নথিপত্রে সই করাতে যান অর্থ সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান।
তবে এবার অধিবেশনের মধ্যে বিরতি থাকবে। সব মিলিয়ে ১২ কার্য দিবস চলবে সংসদের অধিবেশন। গতবছর ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন ছিল নয় কার্যদিবসের।
সংসদ সচিবালয়ের খসড়া কার্যসূচি অনুযায়ী, ৬ জুন কমিটির বিল সম্পর্কিত রিপোর্ট উত্থাপন, চারটি বিল উত্থাপন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের উপর আলোচনা হবে।
৭ জুন সম্পূরক বাজেটের আলোচনা ও পাস এবং নির্দিষ্টকরণ (সম্পূরক) বিল পাস হবে। এরপর সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়ে ১৪ জুন আবার বসবে সংসদের বৈঠক।
পরপর চার দিন অর্থাৎ ১৪ থেকে ১৭ জুন প্রস্তাবিত বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনা হবে।
পরদিন প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। সেদিন পাস হবে অর্থবিল।
৩০ জুন মন্ত্রণালয় ও বিভাগভিত্তিক মঞ্জুরি দাবি নিষ্পত্তিসহ নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। ১ জুলাই শেষ হবে বাজেট অধিবেশন।
ওইদিন প্রশ্ন-উত্তর-পর্ব, বেসরকারি বিল উত্থাপন, সরকারি বিল পাস এবং অধিবেশন সমাপ্তি। এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য রাখবেন। বিরোধীদলের শীর্ষ নেতারাও বক্তব্য দেবেন।