এনআইডির দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছেই, স্পষ্ট করলেন মন্ত্রী

নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানালেও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে যাচ্ছেই, তা ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক মোজাম্মেল হকের কথায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2021, 01:31 PM
Updated : 2 June 2021, 01:49 PM

আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভাপতি মোজাম্মেল বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে এক সভার পর সাংবাদিকদের বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় করবে।”

এদিকে এই পদক্ষেপকে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা হিসেবে দেখার কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।

নির্বাচন কমিশন ২০০৭-০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ শুরু করে। বর্তমানে দেশের ১১ কোটি ১৭ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছে।

ভোটার তালিকার সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার কাজটিও হয় ইসির মাধ্যমে। ২০১০ সালে ইসির অধীনে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ একটি আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়।

এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে দেওয়ার বিষয়ে গত ১৮ মে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক চিঠি নির্বাচন কমিশনে পাঠায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।  

তা নিয়ে আপত্তি ওঠে ইসিতে। তা আগের মতোই ইসির অধীনে রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানোর নির্দেশনাও দেন সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

আ ক ম মোজাম্মেল হক। ফাইল ছবি

বুধবার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ষষ্ঠ সভা শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, জনগণের ভোগান্তি কমাতেই সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর দায়িত্ব নেওয়ার পর কীভাবে কাজ চলবে, সেই নির্দেশনা দেওয়ার কথাও জানান তিনি।

মোজাম্মেল বলেন, “আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছি, দিনে ৫০০ এনআইডি করার সীমা তুলে দিতে হবে। ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। কারণ অনেক মানুষের আবেদন পেন্ডিং আছে। সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে এনআইডি করে দিতে হবে।”

কোনো কারণে কাউকে নির্ধারিত সময়ে এনআইডি দেওয়া সম্ভব না হলে কী কারণে দেওয়া যাচ্ছে না, তা এক মাসের মধ্যে লিখিতভাবে জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মোজাম্মেল বলেন, “করোনাভাইরাসের অজুহাত দেওয়া যাবে না। অফিস বন্ধের কথা বলা যাবে না। বাড়ি বসে কাজ করা যায়।

“স্থানান্তর করার পর পেন্ডিং কাজগুলো দুই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আবেদন ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আমরা জবাবদিহিতামূলক কার্যক্রম চালু করতে চাই।”

ইসির আপত্তির বিষয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের কাজ ভোটার তালিকা তৈরি এবং ভোট কাজ পরিচালনা করা। কোনো দেশে এনআইডির কাজ নির্বাচন কমিশন করে না।”

‘ইসির কফিনে শেষ পেরেক’

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বুধবার সাংবাদিকদের দেওয়া তার লিখিত প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “কী উদ্দেশ্যে এই আত্মঘাতী ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়।

“নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এনআইডি স্থানান্তরের নির্দেশ কমিশনের অঙ্গচ্ছেদের নামান্তর। এ বিষয়ে কমিশনকে না জানানো নির্বাচন কমিশনের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশের সামিল। নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এ যাবৎকালে এমন ঘোরতর দুর্দিন আর আসেনি। এটি কমিশনের জন্য রক্ষাকবচ হলেও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা এখন কোথায়?”

“এটি সংবিধানের ১১৯ ধারার পরিপন্থি। আমি আশঙ্কা করি, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগ অন্যত্র স্থানান্তর সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার অন্তিমযাত্রার আয়োজন,” বলেন তিনি।