‘দানের টাকা মেরে’ হেফাজত নেতাদের বিলাসিতা, রাজনীতি: পুলিশ
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 30 May 2021 09:57 PM BdST Updated: 30 May 2021 09:59 PM BdST
-
পুলিশ বলছে, কেবল মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই গত এক বছরে ৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।
-
হেফাজতের অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাশেমীকে গ্রেপ্তারের পর এ সংগঠনে অর্থায়ন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে পুলিশ
মাদ্রাসা, এতিমখানা কিংবা রোহিঙ্গাদের জন্য বিদেশ থেকে পাঠানো দানের টাকা হেফাজত নেতারা কীভাবে ‘আত্মসাৎ করে নিজেদের বিলাসিতা ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে’ ব্যবহার করেছেন, সেসব তথ্য এখন মিলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেছেন, কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই গত এক বছরে ‘৬ কোটি টাকা’ লেনদেন হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতি তাণ্ডবের পর থেকে সম্প্রতিক বিভিন্ন নাশকতার মামলায় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটির অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এর মধ্যে মামুনুল হকসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতকর্মীদের নাশকতার ঘটনার পর।
তাদের গ্রেপ্তারের পর তদন্তে বেশ ‘অগ্রগতি’ হয়েছে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাহবুব আলম রোববার সাংবাদিকদের বলেন, “তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদেশ থেকে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাঠানো টাকা, যা পাঠানো হয়েছে মাদ্রাসা, এতিমখানা তৈরিতে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য, কিন্তু হেফাজত নেতারা তা নিজস্ব ভোগ বিলাসে, বাড়ি-গাড়ি তৈরিতে এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করেছেন, সেসব প্রমাণ আমরা পেয়েছি।”
তিনি জানান, হেফাজতের অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাশেমীকে গ্রেপ্তারের পর তদন্তে দেখা যায়, এ সংগঠনে যে অর্থায়ন আসে, তার একটি বড় অংশ আসে বিদেশ থেকে।
“মূলত রোহিঙ্গা, মাদ্রাসা, এতিমদের জন্য আসে। তাছাড়া কিছু টাকা আসে যা শুধু হেফাজতের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য। তবে এই টাকাগুলো তাদের হিসেবে সঠিকভাবে রাখা হয় না। হিসেবে আমরা স্বচ্ছতা পাইনি। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা হেফাজতের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ওই টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে।”
যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, “মামুনুল হকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে গত এক বছরে ৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে, আরও বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট আমরা পেয়েছি। আমরা গভীরভাবে মামলাগুলো তদন্ত ও পর্যবেক্ষণ করছি।"
তদন্তে ‘বিপুল পরিমাণ টাকা তসরুফের’ তথ্য মিলেছে জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “ওই টাকা তারা শান-শওকত বাড়ি-গাড়িসহ আভিজাত্য বাড়াতে ব্যবহার করেছেন। যারা এইসব অর্থ ব্যবহার ও তসরুফ করছেন, তারা কিন্তু নিজেরা যেমন টাকার মালিক হচ্ছে, তেমনি সিন্ডিকেট গড়ে অন্যদের কোনঠাসা করেছেন।”
রোহিঙ্গাদের জন্য পাঠানো দানের টাকা হেফাজত নেতারা কীভাবে 'তসরুফ' হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিদেশ থেকে আসা টাকার হিসেবে নেই গ্রেপ্তার হওয়া হেফাজত নেতাদের কাছে। আমরা বিদেশি অর্থের হিসাবেরও স্বচ্ছতা পাইনি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বেশি টাকা এসেছে। টাকাগুলো কীভাবে এসেছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি।
“রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের পরও ফান্ড কালেকশন করা হয়েছে। অনেকে টাকা দিয়েছেন। কী পরিমাণ টাকা এসেছে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না, তবে সেটা বিপুল পরিমাণ টাকা।”
নারী উন্নয়ন নীতি ও শিক্ষা নীতির বিরোধিতা করে ২০১০ সালে গড়ে উঠেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। তবে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলনের পাল্টায় আট বছর আগে রাজপথে নেমে সংগঠনটি বেশি পরিচিতি পায়।
শাহবাগের আন্দোলনের বিপরীতে ব্লগারদের শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সংগঠনটি। পরে যৌথ অভিযান চালিয়ে তাদের মতিঝিল থেকে সরাতে হয়।
ওই ঘটনায় কেবল ঢাকাতেই ৫৩টি মামলা হয়েছিল সে সময়। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন থানায় হয়েছিল আরও অন্তত ৩০টি মামলা।

হেফাজতের অর্থ সম্পাদক মনির হোসেন কাশেমীকে গ্রেপ্তারের পর এ সংগঠনে অর্থায়ন নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছে পুলিশ
বেশ কয়েক বছর নিষ্ক্রিয় থাকা হেফাজতের নেতারা গত বছরের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় সরব হতে থাকে। এরপর গত মার্চ মাসের শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরোধিতায় কর্মসূচি নিয়ে নামে রাজপথে।
তাদের বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচি থেকে কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে সংঘাত-সহিংসতায় ডজন খানেক প্রাণহানি ঘটে। হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, পুলিশ ফাঁড়ি, রেল স্টেশন ভাংচুর ও আগুন ধরানো হয়।
এবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মোট ১৫১টি মামলা হয়েছে, তাতে ৩ হাজার ২৪৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনার ১৪টি মামলার তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। পাশাপাশি নতুন মামলার তদন্তভারও পেয়েছে। পুলিশের অন্য কয়েকটি সংস্থাও বিভিন্ন মামলার তদন্ত করছে।
“আমরা তথ্য শেয়ার করে কাজ করছি। সুনির্দিষ্টভাবে সময় বলা না গেলেও দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাগুলো চার্জশিট দাখিল করা হবে।”
আরও পড়ুন:
হেফাজতকাণ্ড: ৮ বছর আগের অর্ধেক মামলারও তদন্ত শেষ হয়নি, নতুন দেড়শ
হেফাজতকাণ্ডের মামলাগুলোর একটিও যায়নি বিচারে
‘কুরআন-হাদিস দেখেও আগুন দিয়েছে তারা’
হেফাজত নেতা মনির হোসেন কাশেমী গ্রেপ্তার
ছাত্রদের উসকে দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টায় ছিলেন মামুনুল: পুলিশ
-
দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সুকে শেখ হাসিনার অভিনন্দন
-
২৫ বীর মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার নিয়ে সংকলন
-
ঢাকার কাফরুলে স্বামীর ‘ছুরিকাঘাতে’ স্ত্রী নিহত
-
উত্তরায় নার্সের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
-
বিদ্যুতের খুঁটি মাথায় পড়ে রিকশাচালকের মৃত্যু
-
নুরুল ইসলাম হত্যা: পিবিআইয়ের অভিযোগপত্র বাতিল
-
অস্ট্রেলিয়ায় লেবার পার্টির জয়ে অ্যান্থনি আলবানিজকে অভিনন্দন শেখ হাসিনার
-
কতটা সেবা দিতে পারছে বিআরটিসি?
সর্বাধিক পঠিত
- রিজার্ভ আবার ৪২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল
- পিএসজির গোল উৎসবে এমবাপের হ্যাটট্রিক
- শেষদিনের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি
- সাকিবের কোম্পানিকে বিএসইসির নোটিস
- মাঙ্কিপক্স: দেশের সব বন্দরে সতর্কতা
- আমাকে ‘বুড়া’ ডেকেছিল: ঢাবির পঞ্চাশোর্ধ্ব ভর্তি পরীক্ষার্থী বেলায়েত
- ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেন মোসাদ্দেক-এনামুল-সাইফ
- আইনপ্রণেতা হাজি সেলিম দণ্ড নিয়ে কারাগারে
- জামিন নয়, নর্থ সাউথের চার ট্রাস্টিকে পুলিশে দিল হাই কোর্ট
- স্বপ্নময় শুরুর পর লাইপজিগের প্রথম শিরোপা