কোভিড: সীমান্তের জেলাগুলোতে ‘পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত’

ভারত সীমান্তবর্তী কিছু এলাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় কয়েকটি জেলায় ‘বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে’ জানিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘পরিস্থিতি বুঝে’ এসব জেলার লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2021, 11:15 AM
Updated : 31 May 2021, 09:19 AM

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ এক সপ্তাহ বাড়ানোর আদেশের পর রোববার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটির কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের প্রমাণ পাওয়ায় গত ২৪ মে থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে লকডাউনের বিধিনিষেধ জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির বৈঠকে শনিবার এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তবর্তী আরও সাত জেলা অবরুদ্ধে ঘোষণার সুপারিশ করা হয় বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এই সাত জেলা হল- নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা। এসব জেলাতেও গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণ হার উধ্বমুখী।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, “সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর উপর আমরা বিশেষ নজর রেখেছি, যদি সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, ওই জায়গাগুলোতে চলাফেরার উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারব। বিষয়গুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। আপাতত স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছে না। পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন (ফাইল ছবি )

ইতোমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্থানীয়ভাবে লকডাউন দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “ভারতের বিষয়টির আশঙ্কা থেকেই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সেটা আমরা করছি। সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার স্থানীয়ভাবে বিধিনিষেধ দেওয়ার বিষয়ে প্রস্তাব এসেছে, আমরা সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছি। সেই বিষয়ে আমরা হয়তো জানাব, কী করা যেতে পারে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.এবিএম খুরশীদ আলম শুক্রবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতে উদ্ভূত ধরনটি পাওয়া গেছে, যারা কখনও প্রতিবেশী ওই দেশটিতে যাননি।

এর মানে হল, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এই ধরনটির কমিউনিটি সংক্রমণ ঘটছে।

করোনাভাইরাসের এ ধরনটির আনুষ্ঠানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। মিউটেশনের কারণে এর তিনটি ‘সাব টাইপ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া গেছে বি.১.৬১৭.২ ধরনটি।

ইতোমধ্যে অন্তত চার ডজন দেশে করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক এ ধরনটি ছড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ ধরনটিকে চিহ্নিত করেছে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ (ভিওসি) হিসেবে।

ভারত থেকে আসা তিন বাংলাদেশির দেহে করোনাভাইরাসের এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের কথা গত ৮ মে প্রথম জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে এ পর্যন্ত ২৩ জনের শরীরে পাওয়া গেছে করোনাভাইরাসের এই ধরনটি।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, যশোর ও নাটোরের বিষয়টিও ‘গুরুত্ব সহকারে’ দেখা হচ্ছে।

“আমরা চাইব যে জায়গাটিতে স্পেসিফিক্যালি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেই জায়গাটি শনাক্ত করতে। এমনও হতে পারে যে পুরো সাতক্ষীরা নয়, যে স্থানটিতে বেশি সংক্রমণ সেই জায়গাগুলোতে হয়ত (অবরুদ্ধ) করার চেষ্টা হবে, যাতে মানুষের জীবন জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। সরকার সে বিষয়টি খেয়াল রাখছে।”

বর্তমানে দেশে দৈনিক শনাক্ত রোগীর হার ৯ শতাংশের বেশি; সরকার এই হার ৫ শতাংশের কাছাকাছি নিয়ে আসার চেষ্টা করছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “৫ শতাংশে নেমে এলে ধরে নেওয়া হয়, পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আছে, ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নয়। আমরা সেই রকম অবস্থায় দিকে নিতে চাই।”

লকডাউন আরো বাড়বে কিনা জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, “আমরা চাইছি ৫ শতাংশ আসার পরে। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ রেখেছি। তাতে করে মানুষের চলাচলের প্রয়োজনীয়তা বা বাধ্যবাধকতা নাই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকাটা স্বস্তিদায়ক।”

সংক্রমণের বতর্মান অবস্থায় স্কুল-কলেজ খোলা আরও পিছিয়ে যেতে পারে কিনা জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। সেটি তাদের বিষয়। উনি বলেছেন এটা নিয়ন্ত্রণের পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত খুলবে না।”

তাহলে ৫ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত বিধিনিষেধ থাকছে কিনা- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরামর্শ দেবেন। যদিও আমরা বিকল্প ব্যবস্থাগুলো চিন্তা-ভাবনা করছি স্কুল-কলেজ খোলার ব্যাপারে। যে রকম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন পরীক্ষা, অনলাইন ক্লাস চলমান আছে।

“আমরা দেখি, অবস্থা বুঝে…, আমাদের ছাত্রসংখ্যা অনেক বেশি। যখন তারা স্কুলে আসবে তখন সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যেতে পারে। আমাদের বিধিনিষেধ থাকার কারণে কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।”