‘টিকটক হৃদয় বাবু' মানবপাচার চক্রের সমন্বয়কারী: পুলিশ

ভারতে তরুণীকে নির্যাতন করে ভিডিও ভাইরাল এর ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা একটি আন্তর্জাতিক ‘মানব পাচারকারী’ চক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2021, 11:34 AM
Updated : 29 May 2021, 11:34 AM

পুলিশ বলছে, বিভিন্ন সময় এরা আরো বেশ কয়েকজন নারী পাচার করেছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

শনিবার বিকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ নিজের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

রিফাতুল ইসলাম ওরফে ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ চক্রটির সমন্বয়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “হৃদয় বাবুসহ চক্রের সবার বয়স ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধী মিলে এই সংঘবদ্ধ আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রটি গড়ে তুলেছে।“

চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত দাবি করে উপ-কমিশনার শহীদুল্লাহ বলেন, “স্কুল কলেজ পড়ুয়া বখে যাওয়া তরুণী থেকে গৃহিনী পর্যন্ত সবাই এ চক্রের টার্গেট।”

সম্প্রতি বাংলাদেশের এক তরুণীকে ভারতে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। শারিরীক নির্যাতনের সময় ২২ বছরের ওই তরুণীকে দল বেঁধে ধর্ষণও করা হয় বলে এনডিটিভি জানায়।

ওই ঘটনায় ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশ ছয় জনকে গ্রেপ্তার করে। এদের মধ্যে হৃদয়সহ দুজন পালানোর সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের পুলিশ। তারা সবাই বাংলাদেশী বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদের কাছে ভ্রমণ সংক্রান্ত কোনো বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ জানায়, ভাইরাল ভিডিওটির ঘটনায় জড়িত সব বাংলাদেশি অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছে পুলিশ।

টিকটক হৃদয়সহ কয়েকজন আন্তর্জাতিক পাচারকারীচক্রের সহায়তায় অবৈধভাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করতেন বলে কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

এদের মধ্যে চিহ্নিত ‘টিকটক হৃদয় বাবু’ ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা বলে শনাক্ত করেছে ঢাকার পুলিশ।

নির্যাতিত মেয়েটির বাবার বাসাও মগবাজার এলাকায়।

এই ঘটনায় হৃদয়সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও পর্নোগ্রাফির অভিযোগে ঢাকার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন নির্যাতিত তরুণীর বাবা।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, মূলত টিকটক ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে তরুণ-তরুণীরা একটি ফেইসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়। গ্রুপটির মূল পৃষ্টপোষক মূলত আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রটি।

এই গ্রুপের অ্যাডমিনের তত্ত্বাবধানে গত বছরের শেষের দিকে ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি জেলার একটি রিসোর্টে ৭০০/৮০০ জন তরুণ-তরুণী পুল পার্টিতে অংশ নেয়। ওই পার্টির অন্যতম সমন্বয়কারী ছিল রিফাতুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় বাবু বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, “এই গ্রুপে সুনির্দিষ্ট কিছু সদস্য আছে, যারা গ্রুপের নারী সদস্যদের ভারতের বিভিন্ন মার্কেট, সুপার শপ, বিউটি পার্লারে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভন দিয়ে পাচার করে।“

সংবাদ সম্মেলেন আরো বলা হয়, “এই চক্রের মূল আস্তানা ব্যাঙ্গালুরুর আনন্দপুর এলাকায়। মূলত যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে ভারতে পাচার করা হয়।

“চক্রটি ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু হোটেলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। যে হোটেলগুলোতে চাহিদা মাফিক বিভিন্ন বয়সের মেয়েদেরকে পাঠানোর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।”

পুলিশ সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য পেয়েছে দাবি করে কর্মকর্তারা বলেন, পাচার হওয়া মেয়েদের আনন্দপুরে নিয়ে যাওয়ার পর কৌশলে নেশাজাতীয় বা মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে বা জোর পূর্বক বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারন করে।

পরে পাচার করা এসব নারীকে সবসময় হুমকি দেওয়া হয়, অবাধ্য হলে বা পালানোর চেষ্টা করলে এই ভিডিও তাদের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

ভারতের বেঙ্গালুরু পুলিশকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানায়, নির্যাতনের ওই ঘটনাটি ঘটেছে ছয় দিন আগে। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওটি দেখার পর প্রথম পদক্ষেপ নেয় আসাম পুলিশ। ওই ভিডিও থেকে পাঁচ নিপীড়কের ছবি প্রকাশ করে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য টুইটারে পুরস্কারের ঘোষণা দেয় তারা।

হিন্দুস্থান টাইমসের খবরে বলা হয়, ওই ভিডিওর উৎস খুঁজতে গিয়ে আসাম পুলিশ জানতে পারে, নির্যাতনে জড়িতরা আছে বেঙ্গালুরুতে। তারপর সেই তথ্য কর্ণাটক পুলিশকে সরবরাহ করে তারা। পরে বেঙ্গালুরু পুলিশ ওই ভিডিওর সূত্র ধরে ছয়জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানায়।

আরও পড়ুন