সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে যা বললেন মুনিয়ার বোন

মোসরাত জাহান মুনিয়ার আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার তদন্তে সন্তুষ্ট না হওয়ার কথা জানিয়েছেন তার বোন নুসরাত জাহান তানিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 May 2021, 03:09 PM
Updated : 26 May 2021, 04:44 PM

বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে মুনিয়া ‘হত্যাকাণ্ডের’ বিচারের দাবিতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী হাসান দাবি করেন, মুনিয়াকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে।

মামলার পর নুসরাত বলেছিলেন, তিনি আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করলেও পুলিশের তদন্তেই সত্য বেরিয়ে আসবে।

গত এক মাসে মামলার তদন্তে সন্তুষ্ট কি না- সাংবাদিকরা জানতে চাইলে মামলার বাদী নুসরাত বলেন, “না।”

তিনি বলেন, “গত ৫ তারিখ একবার পুলিশ ডেকেছিল। আমি থানায় গিয়েছিলাম। ওরা বলেছে, ময়নাতদন্তে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে, সময় লাগবে।”

ঢাকার এক কলেজের ছাত্রী কুমিল্লার মেয়ে মুনিয়াকে গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই ফ্ল্যাটেই থাকতেন।

সেদিনই কুমিল্লা থেকে এসে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন নুসরাত।

সেই মামলায় তিনি অভিযোগ করেছিলেন, বসুন্ধরা এমডি আনভীর ‘বিয়ের প্রলোভন’ দেখিয়ে মুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। তাকে ওই বাসায় রেখেছিলেন। কিন্তু বিয়ে না করে তিনি উল্টো ‘হুমকি’ দেওয়ায় মুনিয়া আত্মহত্যা করেন।

ওই ফ্ল্যাটে আনভীরের যাতায়াতের প্রমাণ পাওয়ার কথাও জানিয়েছিল পুলিশ।

নুসরাত জাহান তানিয়া

মুনিয়ার ওই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের ভূমিকার কথা সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন নুসরাত।

তিনি বলেন, “আমি কিছু কিছু কাজে ওর জিদের কাছে পরাজিত ছিলাম।”

মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পর তুমুল আলোচনার মধ্যে মুনিয়া-আনভীরের একটি ফোনালাপ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি মুনিয়ার সঙ্গে চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য শারুন চৌধুরীর হোয়াটসঅ্যাপে কথিত কথোপকথনের একটি স্ক্রিনশটও আসে।

শারুন চৌধুরীর সঙ্গে কী সম্পর্ক ছিল- সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নের উত্তরে নুসরাত বলেন, “২৬ তারিখ সকাল বেলা মুনিয়া আমাকে ফোন করে বলেছিল, আনভীর তাকে বিভিন্ন ধরনের অপবাদ দিচ্ছে, ব্লেইম দিচ্ছে। কী ব্লেইম দিচ্ছে জানতে চাইলে বলছে- ‘আসলে আমি সব বলব, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও, অনেক ভুল করছি, আনভীর আমাকে ধোঁকা দিচ্ছে’। কী ব্লেম দিচ্ছে জানতে চাইলে বলছিল, ‘আমি নাকি ওর শত্রু শারুনের সঙ্গে যুক্ত’। তখন বলেছি, হু ইজ শারুন। বলল, ‘তুমি আসো, সব বলব’।”

“এই বলে অনেক কান্না করছে। বলেছে- ‘আমার সামনে অনেক বিপদ, তুমি এখনি আস’,” বলেন নুসরাত।

এক সাংবাদিক তখন প্রশ্ন করেন, “আপনার (নুসরাত) সঙ্গে শারুনের আগে থেকে পরিচয় ছিল, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সব জায়গায় আছে।”

তখন মুনিয়ার বোন বলেন, “আপনারা পারলে এটা প্রমাণ করেন। আমি আছি।”

সায়েম সোবহান আনভীর

শারুন চৌধুরী

শারুন এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেছিলেন, তার সাবেক স্ত্রী সাইফা রহমান মিমের সঙ্গে আনভীরের ‘সম্পর্ক’ গড়ে ওঠার খবর জানাতে মুনিয়া গত বছর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তিনি তখন বলেছিলেন, সাবেক স্ত্রীর বিষয়ে তার কিছু করার নেই।

মুনিয়ার সঙ্গে সেই কথোপকথন মেসেঞ্জারে হয়েছিল জানিয়ে শারুন দাবি করেন, হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট এখন ছড়িয়েছে, তা ভুয়া।

এদিকে নুসরাত আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করলেও তার ভাই আশিকুর রহমান সবুজ দাবি করছেন, তার বোন মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে এবং তাতে ‘জড়িত’ শারুন।

মুনিয়ার লাশ উদ্ধারের পাঁচ দিন পর তিনি ঢাকার আদালতে হত্যা মামলার আবেদন নিয়ে গেলেও আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলার তদন্ত চলায় আপাতত নতুন মামলার কার্যকারিতা স্থগিত রাখার আদেশ দেন।

আর মুনিয়ার ঘটনা নিয়ে বসুন্ধরা ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনভীরের কোনো বক্তব্য সাংবাদিকরা পায়নি।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মুনিয়ার জন্য বুধবার ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহেদী বসুন্ধরা এমডি আনভীরকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

তিনি বলেন, “সাধারণত কোনো এজাহার হলেই পুলিশ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়ে অভিযোগকৃত ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। এমনকি অভিযোগকারীকে না পেলে তার বাবা-মা, স্ত্রী, পরিবারের সদস্যদের এবং সন্দেহভাজন অনেককেই গ্রেপ্তার ও জিজ্ঞাসাবাদ করে।

“মুনিয়া হত্যা মামলার ক্ষেত্রে প্রধান আসামি প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মনে সংশয়, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তাহলে আমরা কি বুঝে নেব, প্রশাসন তাদের হাতে জিম্মি?”

সোমবার রাতে ঢাকার গুলশানের এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়।

মুনিয়াকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সেজন্য বসুন্ধরা এমডিকে দায়ী করেন মেহেদী।

মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আনভীরের মা, তাদের পারিবারিক ‘বন্ধু’ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, বাড়ির মালিক, নিরাপত্তা প্রহরী, গাড়িচালকসহ সন্দেহভাজন সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি জানান তিনি।

পাশাপাশি মামলার মৃত মুনিয়া ও মামলার বাদী নুসরাতের ‘চরিত্র হনন’ করার অভিযোগও মেহেদী আনেন বসুন্ধরা গ্রুপের সংবাদ মাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে।

বসুন্ধরার একটি সংবাদপত্রের পাঠক ফোরামের ‘সদস্য’ হিসেবে মুনিয়ার সঙ্গে আনভীরের যোগাযোগ হয় বলে মেহেদী দাবি করেন।  

কলেজছাত্রী মুনিয়ার ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট নিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, “গত ২০২০ সালের এপ্রিল হতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সে কুমিল্লায় থাকে। সে কলেজের ফর্ম ফিলাপ করতে হবে বলে বোনকে বলে ঢাকায় আসে।

“কুমিল্লার একটা মেয়ে সে গ্রামে বসে গুলশানে বাসা ভাড়া নেবে বা কোনো বাড়িওয়ালা তার জন্য বাসা রেডি করে রাখবে, এটা অসম্ভব। তাহলে আনভীরই কোনো মাধ্যমে আগে থেকেই বাসা ভাড়া নেয়ার ব্যবস্থা করে থাকতে পারে।”