নীলা রায় হত্যা: অভিযোগপত্রে আসামি মিজানুরসহ ৩ জন

প্রেমের প্রস্তাবে ‘রাজি না হওয়ায়’ সাভারের স্কুলছাত্রী নীলা রায়কে ছুরি মেরে হত্যার মামলায় বখাটে মিজানুর রহমান ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2021, 10:59 AM
Updated : 23 May 2021, 01:52 PM

মামলার তদন্ত কমকর্তা সাভার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নির্মল কুমার দাস গত ২৮ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এ অভিযোগপত্র দিলেও বিষয়টি জানাজানি হয় রোববার।

আদালত পুলিশের পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হলে যাচাই বাছাই করে আমরা ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারের জন্য পাঠিয়ে দেব।”

অভিযোগপত্রের তিন আসামি মিজানুর রহমান চৌধুরী (২১), সাকিব হোসেন (২০) ও সেলিম পালোয়ান (৪২) গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

তবে তদন্তে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান (৬০) এবং মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিকার ( ৫০) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি জানিয়ে তাদের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দিয়ে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তারা দুজন এখন জামিনে রয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলার বালিরটেক এলাকার নারায়ণ রায়ের মেয়ে নীলা সাভার পৌর এলাকার ব্যাংক কলোনির অ্যাসেড স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। পৌর এলাকার কাজিমুকমাপাড়ায় এক বাড়িতে তার পরিবার ভাড়া থাকত।

মিজানুর রহমান নামের ওই যুবক নীলাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সাভার পৌরসভার পালপাড়া এলাকায় ছুরি মেরে হত্যা করা হয় নীলাকে।

তার বাবা নারায়ণ রায় পরদিন মিজানুর রহমান, তার বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন নাহার সিদ্দিকাকে আসামি করে সাভার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তার মিজানুর রহমান গত ১ অক্টোবর ঢাকার একজন বিচারিক হাকিমের কাছে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দেন।

সেখানে তিনি বলে, “নীলা বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না বলে সেলিমের দেওয়া ছুরি দিয়ে কোপাই নীলাকে। তখন সেলিম ও সাকিব একটু দূরে দাঁড়িয়েছিল।”

ঘটনার আগে তারা একটি হোটেলে একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেছিল জানিয়ে মিজানুর বলে, “আমার বন্ধু সেলিম বলেছিল, যা করার আজই করে ফেল।”

নীলাকে হত্যার পর লুঙ্গি দিয়ে মুখ ঢেকে সাভার থেকে পালিয়ে বাসে করে আরিচা চলে যান মিজানুর। পরে সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

দণ্ডবিধির ৩০২ এবং ১০৯ ধারায় দেওয়া অভিযোগপত্রে মিজানুরের বাবা মার বিষযে বলা হয়েছে, তারা বার বার তাদের ছেলেকে নীলার সঙ্গে খরাপ আচরণ করতে নিষেধ করেছিলেন।

তাদের কথা না শোনায় মিজানুরকে তারা ওই হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে অন্যত্র বিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি।

সাভারের স্কুলছাত্রী নীলা রায় হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে

প্রায় দেড় বছর ধরে নীলাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমানের ছেলে মিজানুর।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছিল, এ বিষয়ে মিজানুরের বাবা-মাকে জানানো হলেও তারা প্রতিকার না করে উল্টো নীলার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং ভয়-ভীতি দেখাতে থাকেন।

তাদের ইন্ধনে ও প্ররোচনায় আসামি মিজানুর তার সহযোগীদের নিয়ে নীলাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল।

ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছিল, ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্টের কারণে নীলাকে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল তার ভাই অলক রায়। এসময় অস্ত্রের মুখে নীলাকে রিকশা থেকে নামিয়ে টেন হিঁচড়ে পালপাড়া এলাকায় নিয়ে যায় মিজান। 

সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের গলির ভেতরে নিয়ে নীলার গলায়, পেটে, মুখে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছুরি দিয়ে আঘাত করে গুরুতর জখম করেন তিনি। মৃত্যু নিশ্চিত করতে চাপাতি দিয়ে ঘাড়ে আঘাত করে পরে তিনি পালিয়ে যান।

চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে থানা রোডের প্রাইম হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে রাত সাড়ে নয়টার দিকে নীলার মৃত্যু হয়।

পরে হত্যায় ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করে পুলিশ। গত ২৫ সেপ্টেম্বর মিজানুর ও তার সহযোগী সাকিব ও জয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। চারদিন পর মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সেলিম পালোয়ানকে।

মিজানুরের বাবা আব্দুর রহমান ও মা নাজমুন্নাহার সিদ্দিককাকেও মানিকগঞ্জের চারীগ্রাম এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এর আগে মিজানুরের সহযোগী সাকিব ও জয়কে গ্রেপ্তারের পর ছেড়ে দেওয়া হয়ছে বলে জানিয়েছিলেন নীলার বাবা নারায়ণ রায়। তাদের গ্রেপ্তার এবং অভিযোগপত্রে আসামি করারও দাবি জানিয়েছিলেন তিনি।

তবে মিজানুর সাকিব ও সেলিমকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে নারায়ণ রায় রোববার বলেছেন, অভিযোগপত্রের বিষয়ে তারা না-রাজি আবেদন করবেন না।

অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে এবং আটটি আলামতের বিবরণ দেওয়া হয়েছে।

পুরনো খবর