সবাইকে দায়িত্বশীল হতে বলেছে আদালত: রোজিনার আইনজীবী

অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে জামিন দেওয়ার আদেশে বিচারক সবাইকে ‘দায়িত্বশীল’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2021, 08:22 AM
Updated : 23 May 2021, 08:49 AM

ঢাকার মহানগর হাকিম বাকী বিল্লা রোববার পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকা এবং পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনার জামিন মঞ্জুর করেন।

আদেশের পর রোজিনার অন্যতম আইনজীবী আশরাফ উল আলম বলেন, “জামিন মঞ্জুরের আদেশে বিচারক বলেছেন, রাষ্ট্র , সমাজ, আইন আদালতের প্রতি আমরা যে যেখানেই আছি, আমাদের কিছু দায় দায়িত্ব রয়েছে।

“ভবিষ্যতে গণমাধ্যমও যেমন দায়িত্বশীল আচরণ করবে, আমরাও যে যেখানে আছি তেমনি দায়ত্বশীল আচরণ করব। কোনো কাজে যেন রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন না হয়।”

ভার্চুয়াল শুনানি হওয়ায় রোজিনাকে এদিন আদালতে আনা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। তার সহকর্মীরা ইতোমধ্যে কাশিমপুর কারাগারের বাইরে ভিড় করেছেন তাকে স্বাগত জানাতে। 

তার অন্যতম আইনজীবী প্রশান্ত কর্মকার বলেছেন, তারা পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র আদালতে দাখিল করেছেন, রোববারই তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। তবে বিচারক সেদিন কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে বিষয়টি রোববার আদেশের জন্য রাখেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু রোববার শুনানিতে বলেন, সাংবাদিক রোজিনাকে জামিন দেওয়া হলে তাদের আপত্তি নেই। তবে তার পাসপোর্ট যেন জমা রাখা হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ওই শর্ত নিয়ে কোনো আপত্তি না থাকার কথা জানালে বিচারক অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।   

রোজিনার এ জামিনের মেয়াদ হবে মামলার পরবর্তী তারিখ, অর্থাৎ ১৫ জুলাই পর্যন্ত। ওইদিনই এ মামলায় পুলিশকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলার তদন্ত কর্মকতা সেদিনের ঘটনার বিষয়ে একটি ‘ডকুমেন্ট’  আদালতে  জমা দিয়েছেন। তবে তাকে কী আছে, সে বিষয়ে কিছু তিনি বলেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আসামির আইনজীবী এহসানুল হক সমাজী বলেন,  “আমাদের  ওই ডকুমেন্ট দেখনো হয়নি।”

সরকারি নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনের মামলায় গ্রেপ্তার প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে মঙ্গলবার ঢাকার হাকিম আদালতে নেওয়া হয়। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

এদিকে রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে জব্দ করা দুটি মোবাইল ফোন পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোর আবেদন করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ।

রাষ্ট্রীয় গোপন নথি ‘চুরির চেষ্টার’ অভিযোগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সোমবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের এক কর্মকর্তার কক্ষে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়।

পরে রাতে তাকে শাহবাগ থানায় সোপর্দ করে ব্রিটিশ আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডিবিধির কয়েকটি ধারায় মামলা করে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।

রোজিনা ইসলাম তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর তার সহকর্মীরা বলেছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ নিয়ে প্রতিবেদন করায় তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে ব্রিটিশ আমলের এক আইন ব্যবহার করে।

সচিবালয়ে আটকে রাখার সময় রোজিনাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয় বলেও অভিযোগ করেছে তার পরিবার। পুলিশ রোজিনাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করলেও মঙ্গলবার ঢাকার একটি আদালত তা খারিজ করে দেয়।

রোববার জামিন আদেশের পর আদালতে উপস্থিত প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “পুরো সাংবাদিক সমাজ ওয়ার্কিং জানালিস্ট, বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন, প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি, ডিইউজে, বিএফইউজে,  মানবাধিকার কর্মীরা যেভাবে রোজিনার মুক্তির দাবি জানিয়েছেন, তাতে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

“এমন কেউ ছিলেন না যে রোজিনার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন না। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সবাই একত্র হয়েছিলেন। এটা অভূতপূর্ব।”

আনিসুল হক বলেন, “সরকার ও রাষ্ট্রের সঙ্গে  সাংবাদিকদের সম্পর্কটি দ্বন্দ্বিক। তথ্য অধিকার আইনের  ভূমিকাতেই এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রাষ্ট্রের দুর্নীতি কমায় । শুধু জামিন নয়, মামলাটির সুষ্ঠু বিচার করে নিষ্পত্তি করা হোক।”