স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ভুলে’ টিকা পেতে দেরি: মোমেন

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, চীনের সঙ্গে চুক্তির দলিল চূড়ান্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ভুলের কারণে’ টিকা পেতে দেরি হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 May 2021, 05:29 PM
Updated : 20 May 2021, 05:55 PM

বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘ভুল জায়গায়’ সই করে চীনে কাগজপত্র পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে, রাশিয়ায় পাঠানো কাগজপত্রে টিকার চাহিদায় গড়মিল থাকার বিষয়টি ‘পছন্দ’ করেনি দেশটি।

দেরি হলেও চীন থেকে টিকা কেনার বিষয়টি এক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত হতে পারে বলে আশা করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকার মজুত প্রায় শেষের দিকে। নতুন চালান না আসায় ২৬ এপ্রিল থেকে প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ রাখা হয়, যা শুরু হয়েছিল ৮ ফেব্রুয়ারি।

দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার কার্যক্রমও দেশের অনেক স্থানে সরবরাহ না থাকায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রয়োগ করা অক্সফোর্ড-এস্ট্রোজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের চালান পাঠানো বন্ধ করলে।

মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোম্পানিটি বাংলাদেশে দুই চালান পাঠানোর পর আর টিকা দিতে পারছে না।

এতে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সরকার চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা সংগ্রহের পথে পা বাড়ায়।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

দ্রুত এই দুই কোম্পানির টিকা পেতে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য প্রক্রিয়াও জোরদার করা হয়। টিকা কেনা ও দেশে উৎপাদনের আলোচনা চলছে।

বুধবার সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে চীনের সিনোফার্মের টিকা কেনার প্রস্তাব অনুমোদনও করা হয়েছে।

এর মধ্যে চীনের উপহার দেওয়া ৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রেস বিফ্রিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে টিকা সংগ্রহের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চান সাংবাদিকরা।

তখন তিনি বলেন, “চীন মোটামুটি ফাইনাল পর্যায়ে আছে। চীন তিনটা ডকুমেন্ট পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে আমরা দুটো পাঠিয়েছি ফিলআপ করে। দুটোর মধ্যে আবার একটা, যেটা কালকে গেছে। সেটার কিছু অংশ ছিল ইংরেজিতে, আর বাকি অংশ ছিল চীনা ভাষায়। আমরা ফিলআপ করে পাঠানোর সময় চীনা অংশটাই স্বাক্ষর করে পাঠিয়েছি।

”কালকে চীনা ভাষা জানা একজন অধ্যাপক নিয়োগ করে, সেটা ঠিক করা হয়েছে। দিস আর লাউজি ওয়ার্ক।“

এসব কাজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেখার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এটা আমরা করি নাই। আমরা শুধু কানেকশনটা করে দিই। এগুলো (করে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কবে কখন আনবেন প্রভৃতি তারা ঠিক করেন। এটা তাদের। এটা আমাদের কাজের বিষয় নয়। সেখানে একটু ডিলে হচ্ছে।“

রুশ টিকা স্পুৎনিক-ভি

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই কাজে চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হতাশা প্রকাশ করেছেন বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমাদের রাষ্ট্রদূত, হি ইজ ভেরি ফ্রাস্টেটেড, ডকুমেন্টগুলো না হলে প্রসেস চূড়ান্ত হবে না। তিনি চূড়ান্ত করবেন, তিনি খুব হতাশ।

”তিনি আমাকে ফোন করেছেন, আমাকে টেক্সট দিয়ে জানিয়েছেন। আমি সাথে সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মুখ্য সচিবের কাছে পাঠিয়েছি। তাগাদা দেওয়ার জন্য যে, তাড়াতাড়ি করেন।”

অন্যদিকে কাগজপত্র চালাচালিতে টিকার সংখ্যা দু’বার দু’রকম দেওয়ার বিষয়টি রাশিয়া পছন্দ করেনি বলেও মন্তব্য করেন মোমেন।

তিনি বলেন, “রাশিয়ার সাথেও আমাদের ডকুমেন্ট সবগুলো… কিছু হয়েছে কিছু হয় নাই। এক সময় একটা অ্যামাউন্ট বলা হয়েছে, পরে আবার চেইঞ্জ করা হয়েছে। রাশিয়ানরা এগুলো পছন্দ করে নাই।

”আপনি বললেন, এত আনব, পরে বললেন না, তা আরও কমায়া আনব। এগুলো নিয়ে আমরা এখন ব্যস্ত আছি।”

চীনারা আরও কিছু কাগজপত্র চায় জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “হোপফুলি, উই উইল সেটেল বাই দিস উইক। সেলস ডকুমেন্ট হয় নাই। তারা ক্লিন ডকুমেন্ট চায়। কাজ চলছে হয়ে যাবে,” বলেন তিনি।

রাশিয়ার টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “রাশিয়ারটা পুরোপুরি হয় নাই। কারণ যে ডকুমেন্ট ওরা পাঠিয়েছিল, আমাদের এখান থেকে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো ফাইনাল নেগোসিয়েশন হয়নি।”