সাহিনুদ্দিন গত রোববার খুন হওয়ার পর তার মা আকলিমা বেগম ২০ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
গত বছর হত্যাচেষ্টার অভিযোগে যে মামলা আকলিমা করেছিলেন, সেই মামলার অধিকাংশই হত্যামামলারও আসামি।
আকলিমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জামিনে বের হয়ে এলাকায় তারা বুক ফুলিয়ে চলে। আমরা সব সময় ভয়ে থাকতাম। যা ভাবতাম শেষে সেটাই হল। আমার ছেলেকে তারা হত্যা করল।”
আর সেই জমি দখল করতেই তার সন্তানকে খুন করা হয়েছে বলে আকলিমার অভিযোগ। আর এর প্রধান আসামি লক্ষ্মীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও তরীকত ফেডারেশনের সাবেক মহাসচিব এম এ আউয়াল, যার আবাসন ব্যবসা রয়েছে মিরপুরের ওই এলাকায়।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, রোববার বিকালে সাহিনুদ্দিন তার বাসা থেকে বেরিয়ে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ৩১ নম্বর সড়কে আসেন। সেখানে ওঁৎ পেতে থাকা হামলাকারীরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে চলে যায়।
আকলিমার অভিযোগ, তাদের ওই ১০ একর জায়গা দখলের চেষ্টা করে আসছেন হাভেলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের মালিক, সাবেক এমপি আউয়াল।
জমির বিরোধে আদালতে একটি মামলাও রয়েছে। আকলিমা বলছেন, গত বছরের জুলাইয়ে তার স্বামীর মৃত্যুর পর জমিটি দখল করতে তার দুই ছেলেকেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। আর সেজন্যই গত বছরের নভেম্বরে তার দুই ছেলের উপরই হামলা হয়েছিল।
সাহিনুদ্দিন ও মাইনুদ্দিনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে গত বছরের ২৬ নভেম্বর মামলা করেছিলেন আকলিমা।
তিনি জানান, গত রোববার সাইনুদ্দীনকে ফোন করে ডেকে নেওয়া হয়েছিল বিবাদ মিটমাটের কথা বলে। আর ডেকে নিয়ে করা হয় হত্যা।
আউয়াল এবং তার কোম্পানির কর্মকর্তা আবু তাহেরের পরামর্শে ও প্ররোচনায় সুমন ও টিটু নামে দুজন সাহিনুদ্দিনকে ডেকে নিয়েছিল বলে দাবি করেন আকলিমা।
সাহিনুদ্দিন খুনের পর আউয়ালসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
বাহিনীর এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বুধবার চাঁদপুর থেকে হাসান (১৯) নামে একজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। এরপর আউয়ালকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার ভোরে মামলার ১৯ নম্বর আসামি জহিরুল ইসলাম বাবুকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে হত্যার ঘটনার পরদিন র্যাব দিপু নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছিল।
মামলার তদন্ত সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশের মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার আহসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তারা বুধবার মধ্যরাতে সুমন বেপারী ও রকি তালুকদার নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন।
‘হত্যার পরিকল্পনা ও নেতৃত্বদানকারী’ সুমনকে যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকা থেকে এবং তার দেওয়া তথ্যে পল্লবী থানার কালাপানি এলাকা হতে রকিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে থানা পুলিশ মুরাদকে নামের একজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল।
যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রকির নাম এজাহারে নেই।
বাদী আকলিমা বলেন, ‘তাড়াহুড়া করে’ মামলা দায়ের করতে গিয়ে তার নাম বাদ যেতে পারে।
মামলায় তিনি ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৪/১৫ জনের কথা বলেছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা আহসান খান বলেন, “রকি এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য চারজনকে ভাড়া করেছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
ডিবির এই অতিরিক্ত উপ কমিশনার বলেন, জমির বিরোধ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন। অন্য কোনো বিষয় রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখছেন।
গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত হচ্ছে জানিয়ে আহসান বলেন, “অতিদ্রুতই হত্যার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত সকল আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।”
‘স্যার ফিনিশ”
র্যাব জানিয়েছে, ঘটনার ৪/৫ দিন আগে আউয়ালের কলাবাগান অফিসে বসে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।
র্যাব জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডে সুমন, মনির, হাসান, মানিক, ইকবাল, মুরাদসহ ১০/১২জন অংশ নেয়। এদের কেউ সরাসরি খুনে অংশ নিয়েছিল, কেউ আশেপাশে ছিল।
আল মঈন বলেন, “সাহিনুদ্দিনের শরীরের মাথা, গলাসহ উপরের অংশ কোপায় মনির এবং নিচের অংশ কোপায় মানিক। ৫/৬ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর ঘটনাস্থলের কাছে থাকা সুমন ফোন করে সাবেক সংসদ সদস্য আউয়ালকে জানায়- ‘স্যার ফিনিশ’।”
হত্যাকাণ্ডের আগে কিছু টাকা দিলেও পুরো টাকা আর দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।
“তাহের, সুমন হয়ে মামলার ৮ নম্বর আসামি টিটুর মাধ্যমে অন্য আসামিদের টাকা দেওয়ার কথা ছিল।”
আউয়াল, হাসান, বাবুকে গ্রেপ্তারের পর কলাবাগানের অফিসে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানা যায় বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা মঈন।
র্যাব জানায়, ওই জমি নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে বিরোধ চলে আসছিল। গত মাসের শেষে দিকে সুমনের সঙ্গে সাহিনুদ্দিনের মারামারি হয়। তখন সাহিনুদ্দিনকে গ্রেপ্তারও করেছিল পুলিশ। পরে জামিনে তিনি ছাড়া পান।