ঈদে ঢাকা ছেড়েছিল কোটির বেশি মানুষ?

ফেরি কিংবা অন্য কোনো বাহনে গাদাগাদির ঈদযাত্রায় ঢাকা ছাড়া মানুষের হাতে ছিল বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের এক কোটির বেশি সিম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2021, 04:59 PM
Updated : 16 May 2021, 04:59 PM

মহামারীর মধ্যে ‘ভয় জাগানো’ গ্রামমুখী এই ঢলে কত মানুষ ঢাকা ছেড়ছেন তার একটি ধারণা পাওয়া যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারে দেওয়া এই পরিসংখ্যান থেকে।

রোববার এক ফেইসবুক পোস্টে তিনি ঈদের সময়ে বিভিন্ন মোবাইল ফোন অপারেটরের কত সংখ্যক সিম ঢাকার বাইরে গেছে সেই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যে সর্বশেষ ১২ দিনে (৪ থেকে ১৫ মে) বিভিন্ন মোবাইল অপারেটরের এক কোটির বেশি সিম ব্যবহারকারী ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্য গিয়েছেন বলে ওই পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে।

পরে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এবারের ঈদে ঠিক কত লোক ঢাকার বাইরে আসা-যাওয়া করেছেন তার প্রকৃত চিত্র এই সিম সংখ্যা দিয়ে পাওয়া যাবে না। কারণ একজন লোকের একাধিক অ্যাকটিভ সিম থাকতে পারে। আবার একজন মোবাইল সিমের গ্রাহকের সাথে ৩, ৪, ৫ জন বা তার চেয়ে বেশি মানুষ যাতায়াত করতে পারে।

“তবে এটা ঠিক যে সিমের এই ডাটা দিয়ে মানুষের নড়াচড়ার একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।”

ঈদ করতে যে সময়ে এক কোটির সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছেড়েছেন, সে সময়ে ট্রেন ও লঞ্চ এবং আন্তঃজেলা বাস বন্ধ ছিল। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চলাচল করছিল।

ঈদযাত্রার সঙ্গে ভাইরাস যেন আরও ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য ১৩ থেকে ১৫ মে ঈদের ছুটিতে সবাইকে কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার।

কিন্তু ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই লাখো মানুষ যে যেভাবে পারেন সেভাবে গ্রামের বাড়ি গেছেন।

ঘরমুখো মানুষ ছোট ছোট যানবাহনে গাদাগাদি করে বাড়িতে গেছেন। ফেরিতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিল না কোথাও। ভিড়ের চাপে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিতে প্রাণহানিও ঘটেছে।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদ কাটিয়ে আবারও গাদাগাদি করে ফেরিতে পদ্মা পার হয়ে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণ জনপদের কর্মজীবী মানুষ।

রোববার ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী ৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত ঢাকা থেকে চলে যাওয়া এবং ১৫ মে ঢাকার নেটওয়ার্কে ফিরে আসার একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে ফেইসবুকে পোস্ট দেন।

এতে দেখা যায়, ৪ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ৯০ লাখ ২১ হাজার ৬৩৫টি, ১৪ মে সাত লাখ ৯৯ হাজার ৩৮০টি এবং ১৫ মে আট লাখ ২৪ হাজার ৬৮২টি সিম নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন মানুষ।  

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিম ছিল গ্রামীণফোনের, ৬৬ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫টি।

এছাড়া রবির ১৯ লাখ ৫০ হাজার ২৮০টি, বাংলালিংকের ১৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮৮টি এবং টেলিটকের ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৩৩৪টি সিম ব্যবহারকারী ঢাকা ছাড়েন।

এই হিসাবে ১২ দিনে এক কোটি ছয় লাখ ৪৫ হাজার ৬৯৭টি সিম নিয়ে ঢাকা ছেড়েছেন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা।

ঈদ শেষে অফিস শুরু হওয়ার আগে শনিবার বিভিন্ন অপারেটরদের চার লাখ ১২ হাজার ৭৬৩ সিম ব্যবহারকারী ঢাকায় ফিরেছেন বলে তথ্য দেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী। 

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের ফেইসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া।

মোস্তাফা জব্বার ওই পোস্টে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আশংকার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আগেও বলেছিলাম এখনও বলছি ঈদের নামে কতজন কী নিয়ে বাড়ি গেছেন আর কতজন কী নিয়ে ফেরত আসছেন তা ভবিষ্যতই বলতে পারবে। আল্লাহ রহম করো।”

মোবাইল ফোন অপারেটরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এক কোটির বেশি সিমের গ্রাহক ঢাকা ছেড়েছেন। এদের কারো না কারো সাথে পরিবার রয়েছে, আত্মীয় স্বজনও রয়েছে।“

আবার অনেকেই একটির বেশি সিম ব্যবহার করেন। তাই ঢাকা ছেড়ে ‍যাওয়া লোকের সংখ্যা সিমের সংখ্যার চেয়ে বেশি হওয়াই স্বাভাবিক।” 

এমন বেপরোয়া ঈদযাত্রার পর ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা বুঝতে এবং মহামারীর বিস্তার রোধে চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়েছে সরকার।

রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়’ পূর্বের সকল বিধিনিষেধের মেয়াদ ১৬ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।

ট্রেন ও লঞ্চ এবং আন্তঃজেলা বাস আগের মতই বন্ধ থাকছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে জেলার ভেতরে গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে।

মেয়াদ বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “লোকজন ঢাকা ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে গেছে তাদের বাড়ি থেকেও ফিরতে অন্তত ১০ দিন লাগবে। সংক্রমণের কী অবস্থা দাঁড়ায় বোঝা যাচ্ছে না। এ জন্য মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

আরও পড়ুন