ঈদের ছুটির অবকাশে বিধিনিষেধের ঢাকা

ঈদের পরদিন ফাঁকা রাস্তা খাঁ খাঁ করছে, জ্যৈষ্ঠের প্রখর রোদ উত্তাপ ছড়াচ্ছে চারপাশে। ঢাকার রমনা পার্কের পাশে একটি গাছের ছায়ায় রিকশা রেখে কাত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন চালক কলিম উল্লাহ।

সুমন মাহমুদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2021, 09:08 AM
Updated : 15 May 2021, 09:28 AM

তার এই বিশ্রাম আসলে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা। শনিবার সকালে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে বেলা ১২টা পর্যন্ত পকেটে এসেছে একশ টাকার সামান্য বেশি। কিন্তু রিকশাওলাদের তো আর ঈদে ছুটি নিলে চলে না!

“ঈদের মইধ্যে মানুষজন বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। আমাগো কপাল ফাডা। কি করমু? বইসা আছি গাছের ছায়ায়।”

রাজধানী ঢাকা বরাবরই ঈদের ছুটিতে অন্য চেহারায় আবির্ভূত হয়। তার সঙ্গে এবার রয়েছে মহামারীর বিধিনিষেধ। তাই রাস্তঘাট তুলনামূলকভাবে একটু বেশিই ফাঁকা।

গতবছর রোজার ঈদও এসেছিল লকডাউনের মধ্যে, তখনও পরিস্থিতি মোটামুটি এরকমই ছিল।   

সকালে মিন্টো রোডের ধারে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী শিফালী বেগম। বিধিনিষেধে দূরপাল্লার গাড়ি বন্ধ থাকায় এবার তার গাইবান্ধায় গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি।

শিফালী বললেন, “ঈদের পরের দিন রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। কিন্তু ময়লার তো কমতি নেই। সেইজন্য সকাল সকাল ঝাড়ু দিতে হচ্ছে।”

সড়কগুলোতে যানবাহনের ভিড় নেই, কোলাহলও নেই। মাঝেমধ্যে দুয়েকটি প্রাইভেট কার বা অটোরিকশা চলে যাচ্ছে হুশ করে। আর আছে রিকশা। গরমের মধ্যে দিনের বেলা ফুটপাতে পথচারীও নেই তেমন।

রামপুরা, বেইলি রোড, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিনগর, পল্টন, বিজয়নগর, গুলিস্তান, ফকিরেরপুল, মতিঝিল, নর্থসাউথ রোড ঘুরে ঈদের পরের ঢাকার এমন চিত্রই দেখা গেল।

কাকরাইলের একটি হাসপাতালের কর্মী রেজাউল করীম বললেন, “এবার বাড়ি যেতে পারিনি, ডিউটি করতে যাচ্ছি। ঈদের পর তো রাস্তা একেবারে ফাঁকা। এক টানে মগবাজার থেকে চলে এলাম রিকশায়। ভাড়াও বেশি নেয়নি।”

এমনিতে প্রতি রোজার ঈদে রাজধানী থেকে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামে। লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে অনেকে এবার গ্রামে যেতে পারেননি। তবে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যা একেবারে কমও নয়।

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এক ফেইসবুক পোস্টে জানিয়েছিলেন, ঈদের আগে গত ৪ থেকে ১১ মের মধ্যেই ঢাকার বাইরে গেছে ৬০ লাখ ৭২ হাজার ১৭৮ জন। মোবাইল ফোনের টাওয়ার বদলের হিসাব থেকে অপারেটরদের মাধ্যমে এসেছে এই তথ্য।

 স্বাভাবিক সময়ে ঈদের পরদিন ফাঁকা ঢাকায় অনেকেই আত্মীয়-বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যেতেন, কিশোর-তরুণদের ঢল নামত বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। এবার সেসব নেই।

রাজধানীর শপিংমল-দোকানপাট সবই প্রায় বন্ধ। কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও ক্রেতা খুব কম। শান্তিনগর, মালিবাগ এলাকারে কাঁচা বাজারে দেখা গেল অনেক দোকানপাটও খোলেনি। যে বিক্রেতারা দোকান খুলেছেন, তাদেরও অলস সময় কাটছে।

বেইলি রোডের বাসিন্দা শামীমুর রহমানের সেঙ্গ কথা হয় শান্তিনগর বাজারে। তিনি জানালেন ঈদের আগে ঠেলাগাড়িতে সবজি নিয়ে বিক্রেতারা গলিতে ঘুরত। কিন্তু ঈদের পরদিন তারা আসেনি। তাই তিনি সবজি কিনতে বাজারে এসেছেন। কিন্তু বাজারও ফাঁকা।

লকডাউনের কারণে এবার বাড়ি যাওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বললেন, মহামারীর মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় যাওয়াও ঠিক ‘স্বস্তিদায়ক’ না। একরকম ঘরবন্দি অবস্থায় টেলিভিশন দেখে বা ঘুমিয়ে ঈদের ছুটি কাটছে।

“আমার দুই বাচ্চা। তারাও বিরক্ত। কী করব, এমন অবস্থা যে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই।”

এই পরিস্থিতির মধ্যেও শুক্রবার ঈদের ব্কিালে ঢাকার হাতিরঝিলে বিনোদনপ্রত্যাশীদের ভিড় জমেছিল। বিকালে রোদ পড়লে শনিবারও মানুষ বেড়াতে বের হবে বলে আশায় আছেন রিকশা চালক নুরু মিয়া।  

রমনা এলাকায় নিজের রিকশার ওপর বসে থাকা নুরু বললেন, “সকালে ঢাকার মানুষজন বাইর হয় কম, বিকালে বাইর হয়। তখন কিছু খ্যাপ পামু।”

আর গুলিস্তান মোড়ে অটোরিকশা চালক আজাদ জানালেন, বেলা ১২টার দিকে সায়েদাবাদ থেকে কয়েকজন যাত্রীকে তিনি মালিবাগে নিয়ে গেছেন। তারা এসেছেন চান্দিনা থেকে।

“এটা দেখে মনে হচ্ছে স্যার, ২/১ দিনের মধ্যে ঢাকায় মানুষজন আসতে শুরু করবে। আমাদের ইনকাম বাড়বে।”