পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারীর দুই ছেলে উচ্চশিক্ষার জন্য রয়েছেন জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়ায়। তিনি একা থাকেন মিরপুরের বাসায়। তবে তার এই নিঃসঙ্গতা কিছুটা হলেও দূর হয়েছে শুক্রবার ঈদের সৌজন্যে। পুত্রবধূর আমন্ত্রণে তাদের বাড়িতে দিনটি কাটিয়েছেন তিনি।
এই প্রথম স্বামী-সন্তানদের ছেড়ে ঈদ উদযাপন করলেও একমাত্র নাতিকে নিয়ে বেশ ভালোই কেটেছে তার ঈদ।
মাহবুবা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাসায় তো আমি একাই ছিলাম। পাশেই আমার ভাইয়ের বাসা, সেখানে যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার বেয়াই-বেয়ান খুব করে বলল ওনাদের সাথে ঈদের দিনটা কাটাতে, ছেলের বউ আর নাতির সাথে সময় কাটাতে।
“এখানে নাতির সাথে সারাদিন খেললাম। ভালোই কেটেছে দিনটা। কিন্তু ছেলেরাও দূরে, আর স্বামীকে ছাড়া প্রথম ঈদ কাটালাম। একটা শূন্যতা তো আছেই।”
মাহবুবার মত এমন অনেক কোভিডজয়ী এবারের ঈদে দীর্ঘ ক্লান্তি আর যন্ত্রণা ভুলে প্রশান্তি খুঁজে নিতে চেয়েছেন। আবার কেউ কেউ বাড়তি সতর্কতা নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে চেয়েছেন।
কেমন কটাল ঈদের দিনটি- এমন প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক এই পরিচালক বলেন, “ঈদ কাটল সাদামাটা। নাতিটা থাকলে একটু মজা হয়, সে গেছে দাদার বাড়ি। নামাজ পড়ে বাসায় এসে রেস্ট নিলাম। ছোট একটা ভিডিও বানিয়ে সেটা ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম।
“ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু, পরিচিতজনদের ফোন করে খবর নিলাম। ঈদের শুভেচ্ছা জানালাম।”
তবে সাভারে ভাইয়ের ছেলের বাসায় কয়েক ঘণ্টার জন্য গিয়েছেন বে-নজির আহমেদ।
তিনি বলেন, “কিছু সময়ের জন্য এখানে এসেছি। ভালই সময় কাটল এখানে। ফিরে যাব কিছুক্ষণ পর। আরও কিছু ভাইবোন আছে, তাদের বাসায়ও যাব কাল। মেয়ের জামাই, নাতি আসবে কালকে। তখন সময়টা ভালো কাটবে।
“আমরা আগেই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা ঈদ করব সীমিত। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই চলব। আমরা কেউ মার্কেটে যাইনি। গতবারও যাইনি।
গত বছর সেপ্টেম্বরে কোভিডে আক্রান্ত হওয়া এই চিকিৎসকের শারীরিক সুস্থতা মিললেও রোগপরবর্তী কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।
“প্রচুর স্বপ্ন দেখি। তার মানে হল, আমার সাউন্ড স্লিপ হচ্ছে না। করোনাভাইরাসের পর থেকে টানা এ সমস্যাটায় ভুগছি। শারীরিকভাবে ভালো আছি। কিন্তু ঘুমটা হচ্ছে না। এতদিনেও কিন্তু সারল না, রয়েই গেল। সারাজীবনেও ঠিক হবে কিনা জানি না।”
বেসরকারি চাকরিজীবী কামরুল ইসলামও চার মাস আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে সুস্থ হওয়ার পরও সেই আতঙ্ক এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় তাকে। তাই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে এখন চলতে হচ্ছে তাকে। ঈদে তাই যাননি গ্রামের বাড়ি। স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার বাসায়ই কেটেছে তার ঈদ।
তিনি বলেন, “আসলে করোনার পর থেকে একটা ভয় কাজ করে। মনে হয় আবার যদি আক্রান্ত হই, আবার যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাই বাড়িতেও যাইনি এবার। স্ত্রী- সন্তানদের সাথে সময় কাটিয়েছি। খাওয়া-দাওয়া, টিভি দেখা, সবার সাথে ফোনে কথা বলে দিনটা কেটেছে।”
লকডাউনের কারণে সন্তানদেরও তিনি কারও বাসায় যেতে দেননি।
“আসলে আমার কাছে এখন মনে হয়, জীবনটাই আসল। বেঁচে থাকলে অনেক কিছুই করা যাবে,” বলেন কামরুল ইসলাম।
“অন্যান্যবার হোস্টেলে দেখা যায় খুব কম সংখ্যক মেয়ে থাকে। কিন্তু লকডাউনের কারণে এবার অনেকেই সচেতনভাবেই ঢাকা ছাড়েনি। ফলে দেখা গেছে, কেউ না কেউ আছেন।
“অনেকেই আবার ফ্যামিলিসহ আছে ঢাকায়। এতে দেখা গেছে, অনেক বেশি গ্যাদারিং না হলেও সবার সাথে সবার দেখা হল, কুশল বিনিময় হল। এটাও কিন্তু ভালো লাগা। ঢাকা শহরে আজকে অনেকটাই স্বচ্ছন্দ্যে ঘোরা গেছে।”
সহকর্মীর সাথে রিকশায় করে ঘুরেছেন মিথিলা, আরেক আপার বাসায় দাওয়াতেও গিয়েছিলেন।
পরিবার থেকে দূরে থাকায় খারাপ লাগা কাজ করলেও সহকর্মী আর পরিচিতজনদের সাথে সময় কাটানোয় তা ভুলে থেকেছেন তিনি।
“আসলে পরিবার ছেড়ে ঈদ করতে হয়েছে। সবার ভালোর জন্যই আমাদের এটা মেনে নিতে হবে।,” বলেন মিথিলা।