তবে সব জায়গাতেই উপেক্ষিত হয়েছে স্বাস্থ্যবিধি। অনেকেই মাস্ক ঝুলিয়েছেন থুতনিতে। কেউ কেউ মাস্ক ছাড়াই ঘুরে বেড়িয়েছেন। দলবেঁধে ঘোরাঘুরি, আড্ডা দেওয়া তো ছিলই। যারা একটু সতর্ক, ভিড়তে বাড়তে শুরু করলে তারা ধরেছেন বাড়ির পথ।
মহামারীর কারণে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্কসহ অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকায় উন্মুক্ত হাতিরঝিল, চন্দ্রিমা উদ্যান, ধানমণ্ডি লেক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন ভবনসংলগ্ন ফাঁকা জায়গা হয়ে উঠেছিল ঈদের দিনে রাজধানীর বিনোদনপিয়াসী মানুষের অন্যতম গন্তব্য।
হাতিরঝিলের রাস্তা, সেতু, লেকের চারপাশেও ছিল মানুষের ভিড়। কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে, কেউ মোটরসাইকেল-অটোরিকশায় চড়ে বন্ধু-স্বজন ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে আসেন এসেছিলেন। অনেকে ভাড়া করা পিকআপ ভ্যান নিয়েও চলে এসেছেন দলবেঁধে।
সারাদিন গাছের ছায়ায়, বেঞ্চিতে, ফুডকোর্টের টেবিলে কিংবা ওয়াকওয়ের ঢালে বসে দর্শনার্থীরা নির্মল পরিবেশ উপভোগ করতে থাকলেও বিকাল নাগাদ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় আর কোলাহলে গমগম করতে থাকে পুরো এলাকা। কয়েক লেনে বিভক্ত সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে দেখা দেয় যানজট।
দুপুরে তিন বন্ধুকে নিয়ে হাতিরঝিলে বেড়াতে আসেন শাঁখারীবাজারের স্বর্ণের কারিগর ফরিদ উদ্দিন। বিকাল চারটার দিকে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।
ময়মনসিংহের ছেলে ফরিদ গত ছশ বছর ধরেই চাঁদ রাতে বাড়ি ফিরতেন। কিন্তু এবার যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ির কারণে যাননি।
বিকালে রামপুরা প্রান্ত দিয়ে হাতিরঝিল ঢুকে একটু সামনে এগিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সিফাত, রুনা, আবিরসহ একদল কিশোর-কিশোরী। কোন দিকে যাবেন, কোথায় বসবেন, ভিড়ের কারণে সেই দিশা পাচ্ছিলেন না তারা।
“কোথাও বসার জায়গা নেই। রেস্টুরেন্টগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। আমরা কোন দিকে যাব এখনো ঠিক করিনি,” বলেন সিফাত।
“শুনেছি চিড়িয়াখানা খোলা নেই। আশপাশে কোনো শিশু পার্কও খোলা নেই। ঘোরাফেরার জন্য হাতিরঝিলও খুব সুন্দর জায়গা। তবে লোকজন বেড়ে যাওয়ায় গরমটা একটু বেশি লাগছে,” বলেন তিনি।
হাতিরঝিলের পাশেই উলন আবাসিক এলাকায় থাকেন ষাটোর্ধ্ব আলতাফ হোসেন। বিভিন্ন লোকসমাগমে ওজন ও উচ্চতা মাপার যন্ত্র নিয়ে বসেন তিনি।
আলতাফ বলেন, “আজ লোকসমাগম বেশি হওয়াশ ভালই আয় হচ্ছে।”
“একটু খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়ানোর জন্য হাতিরঝিল খুবই সুন্দর জায়গা। এই ঈদে তো আর বাড়ি যাওয়া হয়নি। দিনভর গাছের ছায়ায় বসে বেশ ভালো সময় পার করলাম,” বলেন এনায়েত।