চীনা দূতের বক্তব্যে ক্ষোভ নির্মূল কমিটির

যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন চার জাতির জোট কোয়াডে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ নিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 11:56 AM
Updated : 12 May 2021, 11:56 AM

বুধবার সংগঠনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ১০ মে কূটনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ডিক্যাবের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ‘কোয়াড’ জোটে বাংলাদেশের কল্পিত যোগদানের বিরোধিতা করে যেসব বিরূপ ও রূঢ় মন্তব্য করেছেন আমরা তা কূটনীতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত এবং বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদার জন্য হানিকারক বলে মনে করি।

“কথিত ‘কোয়াড’ এ বাংলাদেশের যোগদান বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে কোনও বক্তব্য প্রদান না করা সত্ত্বেও চীনা রাষ্ট্রদূত যে ভাষায় এর বিরোধিতা করেছেন তাতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহে চীনের আধিপত্যবাদী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা চীনা রাষ্ট্রদূতের এ হেন মন্তব্যের প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা ব্যক্ত করছি।”

বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগ না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ঢাকায় চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং সোমবার ডিক্যাবের ওই অনুষ্ঠানে বলেন, ‘চীনবিরোধী’ ওই জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ‘ক্ষতি’ করবে।

কোয়াড্রিলেটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ- কোয়াড নামে পরিচিত ওই জোটে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রয়েছে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া।

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। (ফাইল ছবি) ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমরা জানি, কোয়াড বানানো হয়েছে চীনের কথা মাথায় রেখে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাপানের পক্ষ থেকেও অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, চীনের কারণেই তারা এই জোটে অংশ নিচ্ছে।” আর সে কারণেই বাংলাদেশ এরকম কোনো জোটে চীন ‘দেখতে চান না’ বলে সতর্ক করেন লি জিমিং।

মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চীনা দূতের বক্তব্যকে ‘আগ বাড়ানো’ কথা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নির্মূল কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা চীনা রাষ্ট্রদূতকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের মূল্যে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে নৃশংস গণহত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল চীন প্রত্যক্ষভাবে পাকিস্তানকে মদদ দিয়ে এই গণহত্যায় সহায়তা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে।

“জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় চীন বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পর্যন্ত দেয়নি। বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের প্রতি বন্ধুত্ব কারও প্রতি বৈরিতা নয়’-অনুসরণ করে পাকিস্তান ও চীনসহ সকল দেশের সঙ্গে সমমর্যাদার কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এর অর্থ এই নয় যে, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট বলে আমাদের সার্বভৌম মর্যাদার প্রতি কারও কোনও অবমাননাকর উক্তি আমাদের মেনে নিতে হবে।”

এতে আরও বলা হয়, “আমরা নিজেদের দেশ ও জনগণের স্বার্থে কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রাখব, কোন দেশের সঙ্গে কী চুক্তি করব সেটা সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিজস্ব বিষয়। এ ক্ষেত্রে চীন বা অন্য কোনও রাষ্ট্রের অভিভাবকত্ব বা হুমকি আমরা কখনও বরদাশত করব না।”

চীনা দূতের কথা ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয় বিবিৃতিতে।

সংগঠনের সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সহসভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কলামনিস্ট সৈয়দ মাহবুবুর রশীদ, শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, শিল্পী আবুল বারক আলভী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বিবৃতে সই করেন।