চীনা টিকা অনুমোদনে দেরি নিয়ে দোষারোপের কিছু নেই: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশে চীনা টিকার অনুমোদন পেতে দেরি নিয়ে দেশটির রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জনগণের স্বার্থ বিবেচনায় ‘নিয়মকানুন মেনেছে’ বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 May 2021, 11:50 AM
Updated : 13 May 2021, 08:24 AM

বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে কাউকে দোষারোপের কারণ নেই, কেননা এটা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়।”

গত ২৯ এপ্রিল চীনা কোম্পানি সিনোফার্মের তৈরি এই করোনাভাইরাসের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ। এরপর ৭ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও (ডব্লিউএইচও) এ টিকা ব্যবহারের সবুজ সংকেত দেয়।

সিনোফার্মের তৈরি ওই টিকার পাঁচ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দিয়েছে চীন। সকালে বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে টিকার চালান ঢাকায় আসার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এ অনুষ্ঠানে তা হস্তান্তর করেন চীনা রাষ্ট্রদূত।  

পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও সিনোফার্মের টিকা কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। তবে সেই কেনা টিকা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে সোমবার এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন চীনা রাষ্ট্রদূত জিমিং।

চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বুধবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠানে তার দেশের উপহার হিসেবে পাঠানো করোনাভাইরাসের টিকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে হস্তান্তর করেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কারণ হিসেব তিনি টিকার অনুমোদন দিতে ‘দেরি হওয়ার’ কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, চীন সরকার টিকা উপহার দেওয়ার কথা বলেছিল ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু অনুমোদন দিতে বাংলাদেশ প্রায় তিন মাস সময় নিয়েছে।

তার বক্তব্যের দু’দিনের মাথায় উপহারের টিকা হস্তান্তর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতেই সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

তিনি বলেন, “শুরুতে চীনা টিকা নিয়ে কিছুটা রক্ষণশীলতা ছিল, কারণ এটা ডাব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) অনুমোদিত ছিল না। আমাদের কিছু নিয়মকানুন আছে, যা নতুন নয়। জনগণের ভালো ও কল্যাণের কথা বিবেচনা করে বহু আগে প্রণীত।

“নিয়মকানুন হচ্ছে- যদি কোনো ওষুধ বা টিকা ডাব্লিউএইচওর অনুমোদন না পায়, তাহলে আমরা সেটা জনগণের ওপর প্রয়োগে ইতস্তত থাকি। এ কারণে আমরা চীনের টিকা অনুমোদনে বিলম্ব করেছি।”

চীনের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “চীন সরকার যুক্তি দেখিয়েছিল, ৮ কোটিরও বেশি লোক তাদের টিকা ব্যবহার করেছে, যা এখন ১০ কোটি ছাড়িয়েছে এবং কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি।

“বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান এই টিকা গ্রহণ করেছেন। ৬০টি দেশে তারা এই টিকা রপ্তানি করেছে এবং সৌভাগ্যক্রমে তাদের কোনো খারাপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। এর ফলে বাংলাদেশ এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের জনগণ ও তাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না। বর্তমানে চীনের টিকাও ডাব্লিউএইচও’র অনুমোদন পেয়েছে, আমরা খুবই সৌভাগ্যবান।”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে প্রতিযোগিতার মধ্যে গত বছরের মাঝামাঝি যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনের প্রতিষ্ঠান টিকা উদ্ভাবনে সাফল্য পায়।

চীন সরকারের উপহার হিসেবে পাঠানো সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে বুধবার সকালে ঢাকায় পৌঁছায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০জে উড়োজাহাজ।

এর মধ্যে গতবছরের অগাস্টে চীনের সিনোভ্যাকের টিকার তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার অনুমোদনের কথা বলেছিল বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর এগোয়নি।

সরকার তখন জানিয়েছিল, কোনো টিকা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) এবং যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো দেশের অনুমোদন পেলে তবেই সেটার প্রয়োগে যাবে বাংলাদেশ।

এরপর অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে গত নভেম্বরে চুক্তি করে সরকার। জানুয়ারির ৮ তারিখে দেশে ওই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।

দুই চালানে সেরাম ইনস্টিটিউট ৭০ লাখ ডোজ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকার রপ্তানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেকায়দায় পড়ে।

ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ হওয়ার শঙ্কা জাগায় এপ্রিলে সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এর অংশ হিসেবেই অল্প সমায়ের মধ্যে রাশিয়ার স্পুৎনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হয়।