এত বাড়ির মালিক, তবু পূর্বাচলে প্লট লাগবে কেন: প্রধানমন্ত্রী

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় বিশাল বিশাল অট্টালিকা থাকলেও নতুন গড়ে উঠা পূর্বাচলে একটি প্লটের জন্য অনেকের মরিয়াভাবের কথা তুলে ধরে তার সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 May 2021, 07:36 AM
Updated : 9 May 2021, 09:32 AM

রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের অবশিষ্ট মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত একহাজার ৪৪০ জনের মধ্যে প্লট বরাদ্দ প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি অতিরিক্ত সম্পদ গড়ার মানসিকতা পরিহারের আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর ফ্ল্যাট সবই আছে, তাদের আরো লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে যেতে হবে সেই কবরে- মাত্র তিন হাত-সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধনসম্পদ কেউ সাথে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।

“আমরা শহর গড়ে তুলতে চাই। আমাদের দেশে যারা বিত্তশালী তারা প্লট কেনেন, ভালো ভালো দৃষ্টিননন্দন বাড়িঘর বানান। যখন পূর্বাচল শুরু হলো, তখন আমি দেখেছি.. এমনকি গুলশান, বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের, তাদেরও পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। এই রকমও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি।”

রোববার যারা প্লটের বরাদ্দ পেলেন, তাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু যাদের সত্যিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। কাজেই আমার সব সময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন, অথচ আপনারা প্লট পাবেন না এটা হতে পারে না।”

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পূর্বাচলে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের একটা প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব এলেও তাতে সায় দেননি বলে অনুষ্ঠানে সরকারপ্রধান জানান।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, “সেই ফাইলে আমি লিখে দিয়েছিলাম, এখানকার যারা আদিবাসী তারা প্লট পাবে। তারপর আমি এ প্রকল্পের অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেব না এবং কীভাবে প্লট বের করবে সেটা যেন মন্ত্রণালয় বা রাজউক যেন খুঁজে বের করে- সেই নির্দেশনাটাই আমি দিয়েছি।

“আমি এইটুকু চাই- বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেইটুকু পারি, যেভাবে পারি একটা মানুষকে একটা ঘর, একটা মাথা গোজার ঠাঁই সেটা আমরা করে দেব এবং প্রত্যেকটা ঘরেই বিদ্যুৎ থাকবে, আলো জ্বলবে। প্রতিটি পরিবারেই শিক্ষিত মানুষ থাকবে, লেখাপড়া শিখবে।

যুব সমাজকে আত্ননির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেখাপড়া শুধু কেতাবি না, সাথে সাথে ‘ভোকেশনাল ট্রেইনিং’ নিতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে, যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।

“শুধু বিএ, এমএ পাশ করলে হবে না, চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, নিজেরা যেন চাকরি দিতে পারে সেভাবে নিজেদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা সেইভাবে এদেশের যুব সমাজকে গড়ে তুলতে চাই।”

অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্লটের বরাদ্দপত্র তুলে দেন।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকায় মোট ছয় হাজার ২৭৭ একর জমিতে পূর্বাচল নতুন শহর গড়ে তুলতে ১৯৯৬ সালে প্রকল্প নেওয়া হলেও জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়নের কাজে শুরু হতে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। ২৫ বছর আগে শুরু হওয়া সরকারের এই সর্ববৃহৎ আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৭৮২ কোটির টাকারও বেশি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনকালে স্থানীয় এবং মূল অধিবাসীদের মধ্যে যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, তাদেরকে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় প্লট বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেন।

ইতোমধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ হাজার ৪৪২টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী থাকা অবস্থায় মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্ত বাকিদের মধ্যে একহাজার ৪৪০টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রোববার পূরণ করলেন।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্র প্রান্তে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।