মহামারীতে চাকরি খুঁজেছেন ৭৭% অভিবাসী: জরিপ

কোভিড -১৯ মহামারীতে গত বছরের এপ্রিল-নভেম্বর সময়কালে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসীদের প্রায় ৭৭% হন্যে হয়ে দেশে চাকরি খুঁজেছেন বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 03:33 PM
Updated : 8 May 2021, 03:33 PM

শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্র্যাক, ইউএন উইমেন বাংলাদেশ ও নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির যৌথভাবে পরিচালিত ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

গবেষণার জন্য পরিচালিত জরিপে অংশ নেওয়া পরিবারগুলোর ৬১ শতাংশ জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীতে তাদের অন্তত একজন সদস্য চাকরি বা উপার্জনের সুযোগ হারিয়েছেন।

জরিপে আরো দেখা গেছে, এই সময়কালে অনুষ্ঠিত বিয়ের মধ্যে প্রায় তিন চতুর্থাংশ (৭৭%) কনের বয়স ছিল ১৮ বছরের নিচে, যা ২০১৮ সালের জরিপের জাতীয় বাল্যবিয়ের হারের চেয়ে ২৬% বেশি।

শহরের (৭০%) তুলনায় গ্রামে (৮১%) বাল্যবিয়ের ঘটনা বেশি ঘটেছে।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক জানিয়েছে, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে জনমিতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনসমূহ: নতুন পরিস্থিতির চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক ওই গবেষণায় মহামারীকালে বিপরীতমুখী অভিবাসনের প্রভাবে বাংলাদেশের মধ্যম মানের শহর, উপজেলা এবং গ্রামীণ অঞ্চলে জনমিতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশের ওপর পরিবর্তনগুলো তুলে ধরা হয়েছে।

২০২০ সালের ১০ থেকে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৭০টি খানায় এই জরিপ পরিচালিত হয়। যেখানে গত বছরের এপ্রিল-নভেম্বর সময়কালকে ‘রেফারেন্স পিরিয়ড’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

করোনাভাইরাস মহামারিতে বিভিন্ন কারণে যারা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নিজের বসবাসস্থলে ফেরত আসতে বাধ্য হয়েছে তাদের জীবনযাত্রায় সামগ্রিকভাবে যে ধরনের প্রভাব পড়েছে সেটির ওপর এই গবেষণায় বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া খানাগুলোতে প্রায় ২৫% ফেরত আসা অভিবাসী তাদের অভিবাসনের সময় নেওয়া ঋণ পরিশোধ নিয়ে উদ্বিগ্ন।

এই ঋণের গড় পরিমাণ ৭৬ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা।

প্রায় ৪৪ শতাংশ অভিবাসী জানিয়েছেন, তারা কোনো উপার্জনমূলক কাজ পাননি। তাদের মধ্যে কিছু পরিবার সঞ্চয় ভেঙে বা বিভিন্ন সম্পদ ভাড়া বা বন্ধক দিয়ে খরচ চালিয়েছে।

ব্র্যাক জানিয়েছে, “জরিপ করা পরিবারগুলোতে মহামারী চলাকালীন সময়ে গড়ে মাসিক রেমিটেন্স ৫৮% কমেছে, যা এই সময়ে রেমিট্যান্সের উচ্চ প্রবাহের জাতীয় প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পূর্ণ বিপরীত।

”তবে পূর্ববর্তী গবেষণায় এর একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখা রয়েছে তা হলো, সাধারণ পরিস্থিতিতে পরিবারগুলোর প্রাপ্ত প্রায় অর্ধেক রেমিটেন্স আসে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে (যেমন হুন্ডি, হাউস কিংবা যাত্রী বহন করে নিয়ে আসে) যা করোনার কারণে বিঘ্নিত হয়েছে।”

জরিপের সময়কালের অভিবাসীদের মধ্যে প্রায় ৪.৫৭% স্কুলের শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল খোলার পর তারা পূর্ববর্তী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফেরত যেতে না পারলে স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর চাপ তৈরি হবে।

এছাড়া, ফেরত আসা প্রায় ১৩.৩৫% জনগোষ্ঠীর বয়স চল্লিশোর্ধ এবং ৪.৫৬% এর বয়স পঞ্চাশের ওপরে যাদের ফেরত যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

বিষয়টি স্থানীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বিশেষ করে অসংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। 

ফেরত আসা নারীদের মধ্যে মূলত অভ্যন্তরীণ অভিবাসীরা করোনাকালীন সময়ে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখী হয়েছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে বলে ব্র্যাক জানিয়েছে।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া প্রায় ৩৪% পরিবারের কেউ না কেউ চাকুরি অথবা আয়ের সক্ষমতা হারিয়েছেন এবং অর্থনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া জরিপে অংশ নেওয়া তিন-চতুর্থাংশের কিছুটা বেশি (৭৭%) পরিবারে করোনাভাইরাসের কারণে গড় মাসিক আয় কমেছে।

এই সময়ে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে তারা সঞ্চয় ও ধারদেনার ওপর নির্ভরশীল হয়েছেন।

এতে পরিবারগুলোর গড় মাসিক সঞ্চয় ৬২% কমেছে এবং ঋণের পরিমাণ ৩১% শতাংশ বেড়েছে। মাসিক গড় খরচের পরিমাণও কমেছে ৮.৬%।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম বলেন, “অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্থানান্তরের ফলে মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে। তাদের জন্য কীভাবে অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করে দেওয়া যায় এ নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

”এর জন্য আমাদের একটি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, আগামী বাজেটই হতে পারে এ পরিকল্পনা।”

আলোচনা সভায় ইউএন উইমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শোকো ইশিকাওয়া, সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক কেএএম মোরশেদ বক্তব্য দেন।