‘লুকোচুরি’ করে চলছে দূরপাল্লার বাস

ঈদ যাত্রায় মানুষের গ্রামে ফেরার তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে পুঁজি করে নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও কৌশলে বিভিন্ন রুটে চলছে দূরপাল্লার বাস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 01:23 PM
Updated : 8 May 2021, 01:37 PM

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে লকডাউনের মধ্যে দূরপাল্লার বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এর মধ্যেও লুকিয়ে টিকিট বিক্রি করে উত্তর কিংবা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাচ্ছে বিভিন্ন কোম্পানির বাস।

ঢাকা থেকে দেশের বেশিরভাগ এলাকার দূরপাল্লার বাস চলে গাবতলী থেকে।

শনিবার দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেল বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ। তবে আশপাশে ঘুরছেন টিকিট বিক্রেতারা। কাউন্টারে ঘুরতে দেখে অন্তত পাঁচজন জানতে চাইলেন ‘কোথায় যাবেন’।

উত্তরের জেলা বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, সব রুটের গাড়ির টিকিটই আছে তাদের কাছে। তবে অগ্রিম টাকা দিয়ে টিকিট নিশ্চিত করতে হবে। দাম দ্বিগুণেরও বেশি।

কুষ্টিয়া যেতে কী ব্যবস্থা জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম নামে কাউন্টারের একজন কর্মী বলেন, ‘বিশ্বাস কইরা আগে বিকাশে ট্যাকা দিবেন, আপনার যাওনের সবদিক আমরা দেখুম।’

দুই সিটের জন্য বিকাশে এক হাজার টাকা দিতে হবে বলে জানালেন তিনি।

এর আগে লকডাউনের শুরুর দিকে আমিন বাজার, হেমায়েতপুর এলাকা থেকে সামনে ‘পোশাক কর্মী পরিবহন’ লিখে দূরের জেলাগুলোতে বাস চলাচল করেছে বলে জানালেন বাস শ্রমিকরাই।

তবে বৃহস্পতিবার থেকে কোনো বাস সাভার এলাকাতে ঢুকতে দিচ্ছে না পুলিশ। তখন স্থান বদলে ‘লুকোচুরি’ করে বাস ছাড়া হচ্ছে বাইপাইল ও চন্দ্রা এলাকা থেকে।

সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জেলার মধ্যে বাস চলাচল শুরু হলেও দূরপাল্লার বাস বন্ধ রাখা হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ঈদে ঘরমুখো মানুষদের জন্য অর্ধেক যাত্রী নিয়ে দূরপাল্লার গণপরিবহন চালুর দাবিতে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা।

শুক্রবার অনেকটা ‘লুকোচুরির’ মধ্যেই দিনাজপুর যাওয়ার বাসের টিকিট পান প্রকৌশলী আলিউল ইসলাম।

তিনি অগ্রিম টাকা দিয়েছেন বিকাশে। টিকিট কাটতে যেতে হয়েছে আশুলিয়ায়। আর মাইক্রোবাসে করে গিয়ে চন্দ্রা থেকে বাসে উঠেছেন। শুক্রবার রাতে রওনা দিয়ে দিনাজপুর পৌঁছেছেন শনিবার দুপুরে।

আলিউল ঈদে বাড়ি যাওয়ার তাগাদা থেকে শ্যামলীর রাহবার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি বাসের কাউন্টারে এসেছিলেন শুক্রবার। সেখানে তার সঙ্গে কথা হয়।

পরে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাউন্টারে যাওয়ার পর বাস বন্ধ বলে জানানো হয়। তবে ফোন নম্বর চেয়ে নেন একজন কর্মী। কিছুক্ষণ পর ফোনে জানানো হলো বাস যাবে। এ জন্য আসতে হবে আশুলিয়ার বাইপাইলের আজিজ পাম্পে। আর টিকিট নিশ্চিত করতে অগ্রিম টাকা দিতে হবে বিকাশে।

“অগ্রিম দিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় আলিউল আজিজ পাম্পের কাউন্টারে পৗঁছে টিকিট কাটেন। এই পথের সাধারণ ভাড়া ৫০০ টাকা হলেও (অগ্রিমসহ) টিকিটের দাম নেওয়া হয় ১২০০ টাকা। এরপর সেই কাউন্টার থেকে যাত্রীদের মাইক্রোবাসে করে নেওয়া হয় চন্দ্রা মোড়ে। সেখানে রাত সাড়ে ৯টার সময় বাস এলে উঠিয়ে দেন কোম্পানির লোকেরা।“

শনিবার দুপুরের পর দিনাজপুরে পৌঁছেছেন আলিউল। তিনি দীর্ঘ বাসযাত্রায় পথের বর্ণনা দেন।

তিনি জানান, টিকিটের মূল্য দ্বিগুণ নিলেও বাসটি তেমন ভাল ছিল না। টাঙ্গাইলে যাওয়ার পরেই পুলিশ আটকে দেয়, আরও অনেকগুলো বাসসহ ঘুরিয়ে বিকল্প পথে এলেঙ্গা মোড়ে পৌঁছায় তাঁদের বাসটিও। কিন্তু রাতে যমুনা সেতু দিয়ে কোনো বাস পার হতে দেওয়া হয়নি।

পরে অনেকগুলো বাস জমে গেলে যাত্রীরা হইচই শুরু করেন। সকাল ৭টার পর যমুনা সেতু দিয়ে পার হতে দেওয়া হয়। এরপর বগুড়া এবং গোবিন্দগঞ্জেও পুলিশ আটকায়। বাস কর্মীরা তাদের ‘ম্যানেজ’ করে এগিয়ে যায়।

ওই যাত্রী জানান, পথে খাবার বিরতিতে এরকম অনেক বাস দেখেছেন যেগুলো যাত্রী নিয়ে বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছিল। এর কোন কোনটি চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে ছেড়ে এসে উত্তরের বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছে।

লুকিয়ে বাস চলাচলের বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সাংসদ শাজাহান খান বলেন, কারা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বাস চালাচ্ছেন এ বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এসব দেখার জন্য পুলিশ ও প্রশাসন রয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। বিভিন্ন ‘এক্সিট পয়েন্ট’ থেকে দুই-চারটা গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। এর জন্য তো হাইওয়ে পুলিশ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের কোনো দায় নেই।

আরও পড়ুন