বেসরকারি মেডিকেলে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাত বেঁধে দিয়ে আইন হচ্ছে

বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার বাধ্যবাধকতা রেখে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 05:12 PM
Updated : 3 May 2021, 05:12 PM

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ আইন, ২০২১’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বৈঠক শেষে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর এ আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

সোমবার চূড়ান্ত অনুমোদিত খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে কমপক্ষে ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

মহানগর এলাকায় মেডিকেল কলেজের নামে দুই একর, ডেন্টাল কলেজের নামে এক একর এবং অন্যান্য এলাকায় মেডিকেল কলেজের জন্য চার একর ও ডেন্টাল কলেজের জন্য দুই একর জমি থাকতে হবে।

মেডিকেল কলেজের নামে তফসিলি ব্যাংকে তিন কোটি টাকা এবং ডেন্টাল কলেজের নামে দুই কোটি টাকা সংরক্ষিত তহবিল হিসেবে জমা থাকতে হবে।

শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের অনুপাত হতে হবে ১:১০। শিক্ষার্থীদের ফি সরকার নির্ধারণ করে দেবে। মেডিকেল বর্জ্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রক্রিয়া করতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মেডিকেল কলেজের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের জন্য কমপেক্ষ এক লাখ বর্গফুট, হাসপাতাল পরিচালনার জন্য আরও এক লাখ বর্গফুট কন্সট্রাকশন সুবিধা থাকতে হবে। আর ডেন্টাল হাসপাতালের জন্য ৫০ হাজার বর্গফুট থাকতে হবে।

“পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। অ্যাকাডেমিক অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রত্যেক বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজকে কোনো একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্ট হিসেবে থাকতে হবে।”

কেউ আইন ভঙ্গ করলে দুই বছরের কারাদণ্ড, ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মেরিটাইম জোনস আইনের খসড়ার অনুমোদন

এদিন বৈঠকে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট ২০২১’ এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “আগে ছিল ইকোনমিক জোন, যাতে এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও ব্লু ইকোনমি ও মেরিটাইম বিষয়গুলো এ আইনে রয়েছে। এ আইনে কোন এলাকায় কোন মাছ রয়েছে বা সম্পদ রয়েছে তা নিয়ে গবেষণা হবে। সমুদ্র দূষণের সংজ্ঞা ও পরিবেশের গুণগতমানের বিধান রাখা হয়েছে।”

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করে কাজ করার বিধান রেখে এ আইন করা হচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, “মেরিটাইম জোনে যে ধরনের অপরাধ হবে তা এখানে চিহ্নিত করা হয়েছে। মেরিটাইম ট্রাইব্যুনাল করার বিধান রাখা হয়েছে।”

গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন আইন

এছাড়া ‘বাংলাদেশ গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ কর্পোরেশন আইন, ২০২১, এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এদিনের সভায়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এ বিষয়ে ১৯৭৬ ও ১৯৮৬ সালে সামরিক সময়ে দুটি অ্যামেন্ডমেন্ট ছিল, উচ্চ আদালতের আদেশ অনুযায়ী এটি পরিবর্তন করে এ আইনে নিয়ে আসা হয়েছে।”

আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন থাকবে ৫ হাজার কোটি টাকা, পেইডআপ ক্যাপিটাল হবে ২০০ কোটি টাকা। একজন চেয়ারম্যান থাকবেন এর নেতৃত্বে।

কর্পোরেশনের কাজ হবে গ্যাস, তেল ও খনিজসম্পদ নিয়ে গবেষণা করা, উন্নয়ন ও কর্মপরিকল্পনা এবং এলএনজি আমদানি ও বিপণনের ব্যবস্থাপনা করা।

এ আইন নতুন করে নিয়ে আসার যুক্তি তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “এলএনজি বা সিএনজি কনসেপ্টতো ওই সময় তো ছিল না। এ আইনে কোম্পানি গঠন করতে হবে কোম্পানি আইন অনুযায়ী এবং কর্পোরেশন তার অধিনস্ত শেয়ার বা স্বত্ব ধারণ করতে পারবে। কর্পোরেশন সরাসরি অনুমোদনক্রমে ব্যাংকে মেয়াদী আমানত বা অন্য কোনো জ্বালানি সংশ্লিষ্ট লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে।”

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে

চলতি বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি থেকে মার্চ) মন্ত্রিসভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কম।

মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২১ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার পাঁচটি বৈঠক হয়। তাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৪১টি। তার মধ্যে ২০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৪৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রিসভার ১০টি বৈঠক হয়েছিল। ওই সময়ে সিদ্ধান্ত হয়েছি ৭১টি, যার মধ্যে ৪৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। বাস্তবায়নাধীন ছিল ২৫টি। বাস্তবায়নের হার ছিল ৬৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, গত ৭ জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে একটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং একটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। এ সময়ে সংসদে আইন পাস হয়েছে ছয়টি।

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে চারটি নীতি বা কর্মকৌশল এবং চারটি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছিল। সে সময়ে সংসদে সাতটি আইন পাস হয়।