লকডাউনে চলল স্পিডবোট, ঝরল ২৬ প্রাণ; দায় নিচ্ছে না কেউ  

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের লকডাউনে যখন নৌ চলাচলও বন্ধ, তখন স্পিডবোট চলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটার পর এখন তার দায় কেউ নিতে চাইছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদককামাল হোসেন তালুকদারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 May 2021, 04:29 PM
Updated : 3 May 2021, 04:29 PM

নৌচলাচল তদারককারী কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ বলছে, ঘাট বন্ধের মধ্যে ওই স্পিডবোট চলা আটকানোর দায়িত্ব ছিল নৌ পুলিশের। নৌপুলিশ অভিযোগবিদ্ধ করছে বিআইডব্লিউটিএকে।

এদিকে এই নৌদুর্ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তদন্তে যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

সোমবার সকাল ৭টার দিকে স্পিডবোটটি মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা নদীতে বালুবাহী নৌযানের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়ে উল্টে ডুবে যায়। এর আরোহী ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার পর মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক রহিমা খাতুন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পদ্মার ওপারে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে শিবচরের বাংলাবাজার ঘাটে আসছিল স্পিডবোটটি।

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধের লকডাউনে গত ৫ এপ্রিল থেকেই সারাদেশে নৌচলাচল বন্ধ। ফলে এই স্পিডবোটের চলারই কথা ছিল না।

৫ এপ্রিলের পরও শিমুলিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট চলতে দেখা গেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’, তার মধ্যেই ঘটল এই নৌ দুর্ঘটনা।

লকডাউনের মধ্যে গত ১৩ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট থেকে স্পিডবোট চলতে দেখা গিয়েছিল। ফাইল ছবি

বিআইডব্লিউটিএ-নৌপুলিশ পাল্টাপাল্টি

লকডাউনের মধ্যে এই স্পিডবোট চলাচল করা নিয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছাড়েনি, লুকিয়ে চলছিল।

“শিমুলিয়া ঘাট তো তালা মারা। ওই ঘাট দিয়ে কোনো নৌযান চলাচল করছে না। লঞ্চগুলোও ঘাটে নোঙর করা।”

গোলাম সাদিক বলেন, স্পিডবোটটির চালক চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ‘গোপনে’ যাত্রী তুলে পারাপার করছিল।

স্পিডবোটটি অবৈধ কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ নয়। এটির চলাচলের অনুমতি ছিল।

পদ্মা পারাপারে থাকা স্পিডবোটগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান।

লকডাউনের এই সময়ে জরুরি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন, পদ্মা পারাপারে তাদের ফেরি ব্যবহারের অনুরোধ জানান তিনি।

বিআইডব্লিউটিএর একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই দুর্ঘটনার দায় নৌপুলিশকে নিতে হবে। যাত্রীবাহী স্পিডবোট চলছে নদীতে, তা নৌপুলিশ কেন ধরছে না?”

তিনি বলেন, যে সব নৌযান টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়, তাদের দেখভালের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএর। স্পিডবোট, ট্রলার এগুলো দেখভালের দায়িত্ব নৌপুলিশের।

নৌদর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনের আহাজারি

তার এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নৌপুলিশের কর্মকর্তারা ঘাটের ইজারা দেওয়ার কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিআইডব্লিউটিএর দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন।

নৌপুলিশের ফরিদপুর অঞ্চলের এসপি মো. আব্দুল্লাহ আরেফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘাটের ইজারা দিচ্ছে কারা? ওই সব ঘাট ব্যবহার করেই তো এসব নৌযান চলাচল করে।”

এই দুর্ঘটনার দায় নিয়ে প্রশ্নে তিনি বলেন, “দুর্ঘটনা আমার এলাকায় হওয়ায় আমি মামলা নিচ্ছি। তবে স্পিডবোটটি ছেড়ে এসেছে অন্য জোন থেকে।”

বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক (পরিবহন) রফিকুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এত বড় একটা লকডাউন চলছে, আর টার্মিনাল সিলগালা। এই সময়ে এভাবে যাত্রী নিলে তো নজরে আসা উচিৎ।”

কার নজরে আসা উচিৎ-প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “কোনো সংস্থাকে দোষারোপ করছি না। তবে বিআইডব্লিউটিএ তো ল এনফোর্স এজেন্সি নয়।”

অন্যদিকে নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কাইমুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সড়কের মতো নৌপথে অবৈধ যান তল্লাশি ওভাবে হয় না। কোনো যান জব্দ করতে বা অভিযানে বিআইডব্লিউটিএকে সহায়তা করে তারা।

“তারা যদি বলে ওই নৌযানটি অবৈধ, আটক বা জব্দ করতে হবে, তখন করা হয়।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নৌপথে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে নৌপুলিশ গঠন করা হয়েছে।

“তারপরও এই দুর্ঘটনার জন্য যারা দায়ী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে,” বলেন তিনি।
বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক রফিকুল এবং নৌপুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি কাইমুজ্জামান উভয়ই বলেন, এই দুর্ঘটনায় কারও গাফিলতি থাকলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।