আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে দেশের বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষ এসব ঘর পাবেন। আগামী অর্থবছরে দেওয়া হবে আরো সোয়া এক লাখ ঘর।
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন মানুষের জন্য নতুন ঘর নির্মাণের অগ্রগতি বিষয়ক এক পর্যালোচনা সভায় এই তথ্য জানানো হয়।
‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহ ও ভূমিহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ঘোষনা বাস্তবায়নে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার’ হিসেবে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এরইমধ্যে ২ শতাংশ জমির সঙ্গে ঘর পেয়েছেন সারা দেশের ভূমি ও গৃহহীন প্রায় ৭০ হাজার পরিবার।
সোমবারের সভায় এই প্রকল্পের অধীনে আগামী অর্থবছরে সারাদেশের দরিদ্র, অসহায় ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে নতুন ঘর দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সভায় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সবাইকে অবহিত করেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সভায় সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ মাঠ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব সভায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ভূমি ও গৃহহীন মানুষকে নতুন ঘর করে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিটি বক্তব্যে আবেগের স্বরে ভূমিহীন, গৃহহীনদেরকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কথা তুলে ধরেন।”
তিনি বলেন, “এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটলে সেটা সহ্য করা হবে না। সুতরাং দয়া করে এই কাজকে কেউ হালকা করে দেখবেন না। এই প্রকল্প ও উদ্যোগ নিয়ে আমরা কাউকে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দেব না।”
সঠিক লোক যাতে বরাদ্দ পায় সেটা তত্ত্বাবধানের পাশপাশি সুবিধাভোগীদের প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়ে আহমদ কায়কাউস আরও বলেন, “তাহলে কেউ কোনো অভিযোগ করলে সাথে সাথে সঠিক জবাব দেওয়া যাবে।”
এছাড়া অসহায় মানুষের সহায়তা নিশ্চিতে মাঠ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা কাজ করছেন তাদের তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্যও বিভাগীয় কমিশনারদের নির্দেশ দেন তিনি।
রোববার ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর পক্ষ থেকে ভূমি ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে ৫ কোটি টাকা দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আহমদ কায়কাউস বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে টাকাটা দিয়েছেন আমরা অবিলম্বে তা বরাদ্দ করতে চাই।”
সভায় আগামী বছর গৃহ ও ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেবার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তিনি বলেন, “আগামী অর্থবছর অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার ঘর তৈরি করতে হবে। এই ঘর তৈরির মধ্যেই আমাদের জমি ঠিক করতে হবে, জমি কিনতে হবে। জমি কেনার জন্য যেই অর্থ প্রয়োজন হবে সেটা প্রধানমন্ত্রী দেবেন। সুতরাং কোনো সমস্যা নাই।”
দেশে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রকল্প নেওয়া হয়, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ সাল থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়।
এরপর প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে ‘মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা ২০২০’ প্রণয়ন করা হয়।
এ লক্ষ্যে গত বছর জুনে সারা দেশে ভূমি ও গৃহহীন ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারের তালিকা করা হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হয় তাদের জীবন বদলের উদ্যোগ।