রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা স্পুৎনিক বাংলাদেশে অনুমোদন

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকার সরবরাহ সঙ্কটে টিকাদান কার‌্যক্রম নিয়ে জটিলতার মধ্যে রাশিয়ার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা ‘স্পুৎনিক-ভি’ আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিল বাংলাদেশ সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 April 2021, 08:18 AM
Updated : 27 April 2021, 02:49 PM

আগামী মে মাসে এই টিকার ৪০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে আসবে বলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গত ২৪ এপ্রিল এই টিকা ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করা হয়েছিল। পাবলিক হেলথ ইমার্জেন্সি কমিটির সভায় আজ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।”

সভায় এ টিকার সবকিছু পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রিপোর্ট, ফেইজ ওয়ান, ফেইজ-টু, ফেইজ থ্রির রিপোর্ট এগুলো ইভাল্যুয়েশন করা হয়েছে।”

“আমরা আজ এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিলাম। এখন এটা বাংলাদেশে আমদানি ও ব্যবহারে কোনো বাধা রইল না। আশা করছি মে মাসের মধ্যেই আমরা এই টিকা পেয়ে যাব।”

‘স্পুৎনিক-ভি’ হল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টিকা, যা বাংলাদেশে মানুষের ওপর প্রয়োগের অনুমোদন দেওয়া হল।

এর আগে গত ৮ জানুয়ারি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা আমদানি ও জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছিল সরকার।

সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি টিকা কোভিশিল্ড দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে দেশে গণ টিকাদান শুরু হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরবরাহ সঙ্কটে নতুন চালান না পাওয়ায় অন্য উৎস থেকে টিকা আনার জন্য উদ্যোগী হয় সরকার।

তার অংশ হিসেবেই বাংলাদেশে ‘স্পুৎনিক-ভি’ প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হল। এই টিকা এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়। 

এর আগে পাবনার রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত রাশিয়া, বেলারুশ ও ইউক্রেনের নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য স্পুৎনিক-ভি টিকার এক হাজার ডোজ দেশে আনার অনুমতি দিয়েছিল সরকার। তবে তা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ছিল না।

আনা হবে সরকারিভাবে, দাম ঠিক হয়নি

মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, রাশিয়ার এই টিকাও দুই ডোজ নিতে হয়। প্রথম ডোজ দেওয়ার ২১ দিন পর দ্বিতীয় ডোজ। টিকা সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়। মস্কোর গামালিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করা ওই টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯১ শতাংশ কার্যকারিতা দেখিয়েছে।

“আমরা দেখতে পেয়েছি, এদের এফিক্যাসি স্ট্যান্ডার্ড ভালো। এই টিকার সেইফটি মার্জিনও ভালো। সার্বিক বিবেচনা করে আমাদের দেশে, সারাবিশ্বে যে মহামারী চলছে সে বিবেচনায় রেখেই আমরা এই টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছি।”

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে স্পুৎনিক টিকা দেওয়া যাবে কি না জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসনের মহাপরিচালক বলেন, “এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে, ন্যাশনাল ইমিউনাইজেশন টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ- তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।

“তবে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হল- যারা অক্সফোর্ডের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অক্সফোর্ডের টিকাই নেবেন।”

এক প্রশ্নের উত্তরে মাহবুবুর রহমান বলেন, স্পুৎনিক টিকা আমদানি করা হবে সরকারিভাবে। এ বিষয়ে সরকারের একটি কমিটি করা হয়েছে।

“এই কমিটির মাধ্যমে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করে কত পরিমাণ আসবে, কত দাম হবে তা নির্ধারণ করে আমদানি করা হবে। দাম কী হবে তা ঠিক করবে সরকারের ওই কমিটি।”

বাংলাদেশে এই টিকা উৎপাদনের কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “বিষয়টি নিয়ে কথা বার্তা চলছে। বাংলাদেশে পপুলার, ইনসেপ্টা এবং হেলথকেয়ার টিকা তৈরি করতে পারে। ইনসেপ্টা রাশিয়ার সঙ্গে এরইমধ্যে কথাবার্তা শুরু করেছে।

“তারা বলেছে আমাদের দেশে টিকা তৈরি করা যায় কিনা। টেকনোলজি ট্রান্সফারও হতে পারে, আবার বাল্ক এনে ফিলার ফিনিশও হতে পারে। কিনে এনেও হতে পারে। ইনশাআল্লাহ আমাদের দেশেই এই ভ্যাকসিন তৈরি হবে।”

শুধু স্পুৎনিক নয়, আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে টিকা নিয়ে কথা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চীনের সিনোফার্মের টিকার অনুমোদনের ব্যাপারেও আমরা কাজ করছি। আমরা হয়ত খুব শিগগির এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারব।”

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকার দেশের ১৩ কোটির বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সেই লক্ষ্যে গত নভেম্বরে সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা আনতে চুক্তি করে সরকার।

প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে এই টিকা আসার কথা ছিল চুক্তিতে। তবে জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ, ফেব্রুয়ারিতে দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ ডোজ মিলিয়ে ৭০ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে আরও ৩২ লাখ ডোজ টিকা।

ভারতে করোনাভাইরাস মহামারী দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় দেশটি টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাংলাদেশের কেনা বাকি ২ কোটি ৩০ লাখ ডোজ টিকা কবে আসবে, তা এখনও নিশ্চিত না।

সরকার গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করে। ৮ এপ্রিল শুরু হয় দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান। ভারত থেকে টিকা আসা অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।

কেনা টিকার বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের এক লাখ ডোজ টিকা মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে বলে সরকার আশা করছে।

এছাড়া চীনের সিনোফার্ম বাংলাদেশকে পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম জানিয়েছেন।