প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ৩০ বছর বয়সী রাসেলসহ মোট চারজনের লাশ ওই ভবন থেকে উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
মৃত চারজনের মধ্যে শহীদুল ইসলামও ওই ভবনের নিরাপত্তাককর্মী ছিলেন। রাসেলের ভাগ্নে অলিউল্লা দিনমুজুরের কাজ করতেন; রাতে মুসা ম্যানসনের ছাদের চিলেকোঠায় রাসেলের সঙ্গেই থাকতেন।
এছাড়া মৃত সুমাইয়া আক্তার চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। তিনি ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মাহফুজ রিভেন জানান, রাত সোয়া ৩টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটি আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। ভবনের ছাদে ও বিভিন্ন ফ্ল্যাটে আটকা পড়া বাসিন্দাদের জানালা ও বারান্দার গ্রিল কেটে বের করে আনা হয়। সকাল ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
সলিমুল্লাহ মেডিকেল এলাকার ফার্মেসি মালিক বাবুল ইসলাম ও তার স্ত্রী হেনা ইসলাম থাকেন মুসা ম্যানসনের পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে। জানালার গ্রিল ভেঙে পাশের বাড়ি হয়ে বেরিয়ে আসতে পারায় তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন।
হেনা ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভোর রাতে আমরা সেহেরির জন্য প্রস্তুতি নেব, দারোয়ান রাসেল তখন হঠাৎ বেল টিপতে শুরু করেল, আর ডাকাডাকি। বের হয়ে দেখি ধোঁয়া আর ধোঁয়া, কিছুই দেখা যায় না। সিড়িতে আগুনের ফুলকি।”
“পাশের বাড়িওলা একটি মই দিলে আমরা জানালার গ্রিল ভেঙে বের হই। আগুনে না পুড়লেও ৫তলা থেকে বের হতে গিয়ে অনেক জায়গায় ব্যথা পেয়েছি।"
হেনা জানান, মুসা ম্যানসনে তারা ভাড়া থাকেন বেশ কয়েক বছর। তবে নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম থাকার কথা তার জানা ছিল না।
“আজকে পাশের বাড়ির মালিক মইয়ের ব্যবস্থা না করলে হয়ত সবাইকে নিয়ে মারাই যেতাম।”
এই বেঁচে যাওয়ার জন্য বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী রাসেলের প্রতিও কৃতজ্ঞ এই পরিবারটি। হেনার ভাষায়, রাসেল না ডাকলে তাদের আগুনের বিষয়টি বুঝতে আরও দেরি হয়ে যেতে।
“আগুন লাগার সাথে সাথে রাসেল সব ঘরে কলিং বেল টিপতেছিল। আগুন লাগছে জানাতে সবাইরে ডাকতেছিল। ছয় তলার ছাদে থাকত রাসেল। ওর লাশ পাইছে দোতলায়।"
“সেহেরির আগে আগে কে যেন দরজায় নক করল। দরজা খুলতেই দেখি আগুন আর ধোঁয়া। দ্রুত দরজা বন্ধ করে আমার হাজবেন্ডকে ডাকলাম, কিন্তু ধোঁয়ায় সবার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। পরে বারান্দার গ্রিল ভেঙে মোটা কাপড় দড়ির মত করে নামিয়ে সবাই বের হয়েছি।”
বংশাল থানার ওসি শাহীন ফকির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চতুর্থ তলার বাসিন্দা সুমাইয়াদের পরিবারের সবাই পাশের এটি নির্মাণাধীন ভবন থেকে এগিয়ে দেওয়া মইয়ের সাহায্যে বের হতে পারলেও সুমাইয়া অচেতন হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
একজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেটসসহ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে সকালে ঘটনাস্থলে আসেন ঢাকার জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। হাজী মুসা ম্যানসনের নিচতলা ও দোতলার কেমিকেলের গোডাউন ‘সিলগালা’ করে দেন তারা।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জেলা প্রশাসক বলেন, "এই ভবনের নিচতলা ও দোতলার বেশিরভাগ কক্ষে কেমিকেলের গোডাউন। আমরা মালিকদের বলেছি দ্রুত কেমিকেল সরিয়ে নিতে। না সরানো পর্যন্ত দোতলা ও নিচতলা সিলগালা করা থাকবে।"
তদন্ত কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক নিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন।