সমস্যা বুঝি, কিন্তু জীবন আগে: প্রধান বিচারপতি

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ভার্চুয়াল বেঞ্চ আরও বাড়ানো গেলেও এখন জীবিকার চেয়ে জীবন বাঁচানোই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2021, 12:35 PM
Updated : 18 April 2021, 12:35 PM

রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চলা ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চে আরও কয়েকটি ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ চালুর দাবি উঠলে তিনি বাস্তবতা তুলে ধরে একথা বলেন। 

ভার্চুয়াল আপিল বেঞ্চ চলার এক পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রধান বিচারপতির কাছে আরজি জানিয়ে বলেন, বর্তমানে চারটি ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ পরিচালিত হচ্ছে। রমজান চলছে, সামনে ঈদ। এ অবস্থায় হাই কোর্টের আরও কিছু ভার্চুয়াল বেঞ্চ বাড়ালে আইনজীবীরা উপকৃত হত।  

তিনি বলেন, “আপিল বিভাগ ও চেম্বার আদালত মিলে সপ্তাহে পাঁচ দিনই সর্বোচ্চ আদালত চলছে। তাই আরও কয়েকটি ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ চালু করা যেতে পারে। তাছাড়া গত এক বছরে আইনজীবীরা ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। তাই প্রয়োজনে অন্তত আরও দশটি ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ চালু করলে আইনজীবীরা উপকৃত হত।

“আমি আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, তাই প্রতিনিয়ত আইনজীবীরা কোর্ট বাড়ানের বিষয়ে আমাকেই বলেন। এ জন্যই বারবার আপনাদের সামনে একথা বলা।”

এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন তখন বলেন, “শোনেন, আমরাও বার (আইনজীবী সমিতি) থেকে এসেছি। আমরাও আইনজীবীদের সমস্যাগুলো বুঝি। জীবন ও জীবিকা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। তবে আগে জীবন, পরে জীবিকা।

“সংক্রমণের ঝুঁকি বিবেচনায় এখন মাত্র মাত্র ৪০ জন স্টাফ নিয়ে আপিল বিভাগ চলছে। হাই কোর্টের চারটি ভার্চুয়াল বেঞ্চে অনেক স্টাফ লাগছে। এই অবস্থায় আরও দশটা হাই কোর্ট বেঞ্চ চালাতে গেলে হাজার স্টাফ লাগবে। তখন তাদের সংক্রমণ ঝুঁকি তৈরি হবে। আমরা সব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

এসময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সমিতির সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি আইনজীবী সমিতির সম্পাদক, তাই আপনি আইনজীবীদের কথা ভেবে একথা বলছেন। কিন্তু মাননীয় প্রধান বিচারপতিসহ আমাদের তো পুরো সুপ্রিম কোর্টের কথা ভাবতে হয়। এমনকি দেশের কথাও ভাবতে হয়। সেসব ভেবেই প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত দেন।”

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে সরকার গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১১ এপ্রিল রাত ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে শপিং মল, দোকান-পাট, হোটেল-রেস্তারাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়।

ওইদিন রাতেই সীমিত পরিসরে দেশের আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত আসে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে।

গত ৫ এপ্রিল রাতে এ সংক্রান্ত আলাদা তিনটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এসব বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৬ এপ্রিল থেকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে শুধু আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত, হাই কোর্টের চারটি বেঞ্চ চালু থাকবে।

এরপর গত ১৩ এপ্রিল আরেক বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চুয়ালি সীমিত পরিসরে আপিল বিভাগের বিচারকাজ পরিচালনার কথা জানানো হয়।  

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় আপিল বিভাগের এক নম্বর কোর্ট প্রতি রোববার, মঙ্গলবার এবং বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিচার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে পরিচালিত হবে। এছাড়া প্রতি সোমবার ও বুধবার সকাল ১১টা থেকে চেম্বার আদালত জরুরি বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করবে।

গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কঠোর ‘লকডাউন’ ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউন মধ্যে মেনে চলার জন্য ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

গত ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত সারাদেশে সব ধরনের অফিস ও গণপরিবহন, বাজার-শপিংমল, দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ প্রভৃতি বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। খোলা থাকবে শিল্প-কলকারাখা। সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং সেবাও খোলা থাকবে।