এবার পহেলা বৈশাখেই রোজা শুরু হওয়ায় অনেক পরিবারে বর্ষবরণের কোনো আয়োজন ছিল না। তাই মন খারাপ করা এক দিন নিয়ে অনেক শিশুর কাছে এসেছে এবারের নতুন বছর।
পল্লবীর বাসিন্দা পৌনে দুই বছরের রুশদা রহমান সোহার বর্ষবরণের দিনটি এবার কেটেছে বাসার চার দেয়ালে।
“গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে পরিবারের সবাই বিচ্ছিন্ন ছিলাম। যেহেতু আমাকে অফিস করতে হতো, তাই সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মার সাথে সে নানার বাড়িতে থেকেছে।
“কিন্তু এবার পরিবারের সবাই একসাথে আছি। লকডাউন থাকলেও বাসার ছাদে আনন্দ করে দিনটি কাটিয়েছে সোহা। আশা করি, পরিবেশ স্বাভাবিক হয়ে আসবে, আর সে নববর্ষের উৎসবে আনন্দ উপভোগ করতে পারবে।”
বাবা-মা ও ছোটবোনকে নিয়ে ঘুরে দিনের বাকিটা সময় কাটত নাহিয়ানের।
“দুবছর ধরে সব ভেস্তে গেছে। এবার মনটা বেশি খারাপ। কারণ এবার প্রত্যাশা ছিল সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবার শপিং করা হয়নি, বের হওয়া হয়নি। তবে আম্মু রাতের খাবারের সঙ্গে ইলিশ মাছের আয়োজন করেছে।”
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরশিয়া মর্তুজার নববর্ষের দিন কাটত স্কুলের মেলায় ঘুরে ও ফুফুর বাড়িতে বেড়িয়ে।
লকডাউনের কারণে এবার ঘরে বসেই নববর্ষের আয়োজন সম্পন্ন করতে হয়েছে এই শিশুর।
আরশিয়া বলে, “খারাপ লাগছে আসলে। শাড়ি পরে বাসায় বসে রয়েছি, বাইরে বের হতে পারছি না। আগে যেটা হত মেলায় যেতাম শাড়ি পরে। বাসায় এসে ছবি তুলতাম। অনেক মজা করতাম। আত্মীয়দের বাসায় যেতাম।
আরশিয়ার বড় বোন প্রিয়ন্তি আরিয়া একই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
প্রিয়ন্তি বলে, “রোজা থাকায় কিছুই হচ্ছে না। রোজা না থাকলে কিছু করা হতো। শাড়ি পরতাম, খাওয়া-দাওয়া হতো। এবার এসব কিছুই হচ্ছে না। আর লকডাউনের কারণে তো বাইরে বের হতেই পারছি না।”
ধানমণ্ডির নালন্দা উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহভিশ বিল্লাহ ঘরে বসেই দিনটি উপভোগ করার চেষ্টা করেছে।
তার ভাষায়, “ঘর থেকে বের হতে পারছি না, সেটা খারাপ লাগছে। তবে ঘরে বসে বাঘ, পেঁচা বানিয়েছি- সেজন্য ভাল লাগছে। আগে বন্ধুদের বাসায় যেতাম, তাদের দাওয়াত করতাম, মেলায় যেতাম। অনেক মজা হত তখন। এবার এসব কিছুই হচ্ছে না।”
নতুন মা হওয়ায় মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শিমু বাড়ই মজুমদারের অনেক পরিকল্পনা ছিল সন্তানকে নিয়ে বৈশাখ উদযাপনের। কিন্তু মহামারী পরিস্থিতি অবনতি হওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে তাকে।
“মন্দিরে যেতে পারলে ভগবানের আশীর্বাদ পেত, নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হতে পারত- তা থেকে সে বঞ্চিত হচ্ছে।”
মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের নার্সারি পড়ুয়া সাফির আহমদ ও তার দেড় বছরের ভাই সাইফ আহমদের বৈশাখ কেটেছে ঘরে। নতুন জামা ও খাবার-দাবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের উদযাপন।
সাফির-সাইফের মা শাহেরিন বুশরা বলেন, “খুবই কষ্টকর সময়। গতবারও লকডাউনে, এবারও লকডাউনে কাটছে। আমাদের বৈশাখ বলতে বাচ্চাকে জামা কিনে দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া। এবার কোনো ফিলিংস নাই। পুরো ঢাকা শহরটাই মরামরা হয়ে গেছে।”
ঢাকার রূপনগরের চারুপাঠ হাতেখড়ি স্কুলের প্লে-১ এ পড়ে নভেরা জাফরান মৃত্তিকা। নভেরা ও তার ছোটভাই আরিয়ানের নববর্ষ কেটেছে ঘরেই।
নভেরার মা তাহমিনা সিদ্দীকা লীনা বলেন, “আগে তো নববর্ষের আগে কেনাকাটা করতাম। বৈশাখে বের হতাম। লকডাউনের কারণে এবার যেতে পারলাম না। এ কারণে বাচ্চাদের মন খারাপ। বৈশাখ উপলক্ষে কিছু করাও হয়নি। রোজা না থাকলে কিছু না কিছু করা হতো।”