যেমন গেল 'মুভমেন্ট পাস' নিয়ে চলাচলের প্রথমদিন

সর্বাত্মক লকডাউনে জরুরি চলাচলের ‘মুভমেন্ট পাস’ নিয়ে শুরু থেকেই অনেকটা ‌‘অতি’ আগ্রহই ছিল নগরবাসীর; দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রতি মিনিটে ২১ হাজার ৩৩৭ বার হিট যেন সেটিরই প্রমাণ।

নিজস্ব প্রতিবেদকমেহেরুন নাহার মেঘলা, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 April 2021, 02:27 PM
Updated : 14 April 2021, 03:04 PM

বিপুল পরিমাণ হিট হলেও অবশ্য নিবন্ধনের সংখ্যা কম। সবাই সাইটে ঢুকলেও আবদনের পুরো প্রক্রিয়া শেষ করেননি। কৌতূহল বশেই অনেকে অ্যাপে ঢুকছেন বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ অনুযায়ী, মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে বুধবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত মোট হিট, অর্থাৎ সাইটে প্রবেশ হয়েছে ৭ কোটি ৮০ লাখ বার। প্রতি মিনিটে হিট ২১ হাজার ৩৩৭ বার।

এ সময়ে ৩ লাখ ১০ হাজার আবেদন হয়েছে মুভমেন্ট পাসের জন্য। পাস ইস্যু হয়েছে আড়াই লাখ।

মঙ্গলবার অ্যাপ চালুর প্রথম ঘণ্টায় আবেদন জমা পড়ে‌ প্রায় সোয়া লাখের মতো। ওই সময় প্র‌তি মি‌নিটে প্রায় ১৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে।

করোনাভাইরাসের অতি বিস্তার ঠেকাতে দ্বিতীয় দফা কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হলে পুলিশের এই মুভমেন্ট পাস নিয়ে বের হওয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে।

এর উদ্দেশ্য ‘অনিয়ন্ত্রিত ও অপ্রয়োজনীয়’ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা এবং জরুরি বিশেষ প্রয়োজনে যাতায়াতের সুবিধা রাখা। তবে হিট বেশি হলেও

বুধবার কঠোর লকডাউন শুরুর প্রথম দিন সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে ছিল কড়াকড়ি অবস্থা। এরমধ্যে এই পাস নিয়ে চলাচলের প্রথমদিনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন নগরবাসী ও পুলিশ সদস্যরা।

ফাইল ছবি

সর্বাত্মক লকডাউনের প্রথমদিনে বুধবার ঢাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও অলিগলিতে অনেককে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। তাদের বেশিরভাগই বের হয়েছিলেন খুচরা জিনিসপত্র এবং কাঁচাবাজারের উদ্দেশে। তাদের অনেকের কাছেই ছিল না মুভমেন্ট পাস।

খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ের পাশে কাঁচাবাজারে দুপুর ২টায় বাজার করতে এসেছিলেন রাকিবুল হাসান। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বাসা এইখানেই। দশ মিনিটের দূরত্বে কাঁচাবাজার। তাই পাস সংগ্রহ করিনি। তবে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ঘর থেকে বের হয়েছি।”

খিলগাঁও রেলক্রসিংয়ের পুলিশ চেকপোস্টে কর্মরত এসআই বিনয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে যারা এই এলাকায় যাতায়াত করছেন, তাদের কাছ থেকে মুভমেন্ট পাস চেক করা হচ্ছে। যারা মাস্ক পরেনি, তাদের মাস্ক সরবরাহও করা হচ্ছে।”

এই এলাকায় বেশ কয়েকজনকে অবশ্য মাস্ক ছাড়া এদিক-সেদিক ঘুরতে দেখা গিয়েছে।

জানতে চাইলে বিনয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কতজনের দিকে নজর রাখা সম্ভব? আমরা যতটুকু পারছি, চেষ্টা করছি- যেন কেউ অযথাই ঘোরাঘুরি না করে। কাছাকাছি বাসা হওয়ার কারণে অনেকের কাছেই পাস ছিল না। তাদেরকে ক্ষেত্রবিশেষে যেতে দিয়েছি।”

রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বিপরীত পাশে শাহজাহানপুর পুলিশ চেকপোস্টে কর্মরত ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। এই এলাকায় যারা প্রবেশ করছিলেন, তাদের থামিয়ে পাস দেখছিলেন তারা। তবে বেশিরভাগের কাছেই ছিল না মুভমেন্ট পাস। অনেকে অফিসের আইডি কার্ড দেখিয়ে যাতায়াত করছিলেন। অনেকে ফিরছিলেন বাজার করে।

চেকপোস্টে শাহজাহানপুর থানার এসআই মমতাজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল থেকে এই পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০ জন মুভমেন্ট পাস দেখাতে পেরেছেন। তাদের বেশিরভাগই বাজার করা, ওষুধ কেনা, সুপারশপে যাওয়া- এইসব কারণ দেখিয়ে পাস সংগ্রহ করেছেন। যাদের কাছে পাস নেই, তারা কারণ দেখাতে না পারলে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত কারণ দেখালে আমরা যেতে দিচ্ছি।”

শান্তিনগর ট্রাফিক পুলিশ বক্সে দায়িত্বরত একজন সদস্য বলেন, “আজকে রাস্তায় জনসমাগম খুবই কম। পাস নিয়ে অনেকে বের হয়েছেন। কিন্তু অনেকে আবার মুভমেন্ট পাস সম্পর্কে জানেন না। অনেকের কাছেই স্মার্টফোন নাই। তারা মুভমেন্ট পাস দেখাতে না পারলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হয়েছেন।”

বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের গাড়িও টহল দিয়েছে। যারা বিচ্ছিন্নভাবে ঘোরাঘুরি করছিলেন, মাইকিংয় করে তাদের সেখান থেকে দ্রুত সরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছিল পুলিশ।

এদিকে সকাল থেকে চেষ্টা করেও সাইটে প্রবেশ করতে না পেরে অনেকেই ‘মুভমেন্ট পাস’ সংগ্রহ করতে পারছিলেন না। এমন বিড়ম্বনার কথা বলেছেন অনেকেই।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ফজলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি থাকি ঝিগাতলায়। মায়ের জন্য জরুরি কিছু ওষুধের প্রয়োজন, যেগুলো শুধু শাহবাগেই পাওয়া যায়। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মুভমেন্ট পাস সংগ্রহের জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাইটে ঢুকতেই পারছি না।”

সূত্রাপুর এলাকার বিলকিস আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগামীকাল আমার টিকার তারিখ দেয়া হয়েছে। আজকে আমার ছেলে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও মুভমেন্ট পাসের জন্য আবেদন করতে পারেনি।”

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের আইসিটি বিভাগের সহকারি পুলিশ সুপার ফরহাদ কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেবাটি চালুর একদিনের মধ্যেই ওয়েবসাইটে হিট এতখানি হবে, সেটি আমরা বুঝতে পারিনি।

“প্রথমে আমাদের নিজস্ব ডাটা সেন্টার থেকেই দুইটি সার্ভার এবং পরবর্তীতে এত হিট হওয়াতে আরোও সাতটি সার্ভারে স্কিল আপ ও রোডব্যালেন্সিং করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “প্রথমদিনেই সাইটটিতে কৌতুহলবশত অনেকে প্রবেশ করেছেন। ফলে সার্ভারে খানিকটা সমস্যা হওয়ায় আবেদন করার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেটি স্কিল আপ করার ফলে অনেকটাই স্মুথ হয়েছে। প্রয়োজনে ব্যাকআপ সার্ভারেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি এই সমস্যা আর হবে না।

“ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ থেকে তেমন সমস্যা না হলেও মোবাইল থেকে সাইটে প্রবেশের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। কিন্তু বেশ কয়েকবার রিলোড করলে সাইটে ঢোকা যাচ্ছে,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, সাইটে যত হিট হচ্ছে অর্থাৎ, প্রবেশ করা হচ্ছে ততটা রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে না।