আসছে ‘কঠোর লকডাউন’

করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় উল্লম্ফনের পর এক সপ্তাহের ‘লকডাউন’ দেয় সরকার; কিন্তু বিধি-নিষেধে কিছু শিথিলতা আনার পর তার কার্যকারিতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে, তেমনি সংক্রমণও কমছে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 April 2021, 06:00 PM
Updated : 9 April 2021, 06:02 PM

এই প্রেক্ষাপটে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউনের’ ঘোষণা এসেছে সরকারের পক্ষ থেকে; যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণে রাশ টানতে হলে অন্তত দুই সপ্তাহের ‘পূর্ণ লকডাউন’ প্রয়োজন।

গত বছরের মার্চে দেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো ‘লকডাউন’ শুরু করেছিল বাংলাদেশ সরকার; তবে তা হয়েছিল সাধারণ ছুটির আবরণে।

গত বছর মার্চের শেষ দিক থেকে মে মাস পর্যন্ত চলেছিল সেই সাধারণ ছুটি। তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাদে আর সবই খুলতে শুরু করে ধীরে; যদিও সংক্রমণ তেমন কমছিল না।

বছরের শেষ দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের গতি কমতে থাকে। চলতি বছরের শুরুতে দৈনিক সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসার পর স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল সরকার।

কিন্তু এর মধ্যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ দিয়েছে পরিকল্পনা ওলটপালট করে। গত এক সপ্তাহ ধরে রোগী বাড়ছে, সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ডও হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানায় শৈথিল্য দেখে বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কার কথা আগে বলে এলেও তাতে কেউ কান দেয়নি।

এই অবস্থায় এক বছর পর গত ৫ এপ্রিল নতুন করে বিধি-নিষেধে জনজীবনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে সরকার। বলা হয়, পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

কিন্তু তারপর ছয় দিন গড়ালেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। উল্টো সরকারই গণপরিবহন খুলে দেয় শহরগুলোতে, খুলে দেওয়া হয় দোকান-পাট, শপিং মলও।

এসব খুলে দেওয়ার পর শুক্রবার আবার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানালেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর লকডাউন’ আসছে। 

সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার, সঙ্গে বাড়ছে জনগণের অবহেলা ও উদাসীনতা।

“এমতাবস্থায় চলমান এক সপ্তাহের লকডাউনে জনগণের উদাসীন মানসিকতার কোনো পরিবর্তন না হওয়ায়, সরকার জনস্বার্থে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য সর্বাত্মক লকডাউনের বিষয়ে সক্রিয় চিন্তা-ভাবনা করছে।”

সেই ‘লকডাউন’ কেমন হতে পারে- তার আভাস দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৪ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ থাকবে।

রোববারের মধ্যে সরকার এই সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবে বলে জানান তিনি।

গত বছর লকডাউনের এমন ফাঁকা ছিল নিউ মার্কেট এলাকার সড়ক। ফাইল ‍ছবি

চলমান সাত দিনের ‘লকডাউনে’ যেসব বিধি-নিষেধ ছিল, তার মধ্যে বড় শহরগুলোতে গণপরিবহন এবং দোকান-পাট, শপিং মল বন্ধের সিদ্ধান্ত শিথিল করা হয়েছিল। ধরে নেওয়া যায়, আসছে ‘লকডাউনে’ এসব আবার বন্ধ হয়ে যাবে।

চলাচলের ক্ষেত্রে দূরপাল্লার বাস, নৌ, ট্রেন ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচলে বিধিনিষেধ রয়েছে এখনও। তবে বিদেশগামী/ বিদেশ প্রত্যাগতদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল থাকবে।

বর্তমান নির্দেশনায় শিল্প কারখানা ও নির্মাণ কাজ চালু রাখার কথা বলা ছিল। কিন্তু পরিবহন বন্ধ রাখার পর কর্মীদের আসা-যাওয়ায় সঙ্কট দেখা দিয়েছিল। প্রতিমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী, এবার সবই বন্ধ হবে।

চলমান লকডাউনে সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসকে সীমিত জনবল দিয়ে কাজ করাতে বলা হয়েছে। তবে বেসরকারি ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর দেখা যায়নি।

সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, যদিও তার কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না।

খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাবে বলে বর্তমান নির্দেশনায় রয়েছে। তবে অনেক রেস্তোরাঁই তা মানেনি।

কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে বলে জানানো হয়েছিল। এই নির্দেশনারও কার্যকারিতা দেখা যায়নি।

নির্দেশনা বাস্তবায়নে সারাদেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলে জানানো হলেও গত বছরের মতো তৎপরতা এখনও দেখা যায়নি।

এদিকে অন্তত দুই সপ্তাহের কঠোর লকডাউন ছাড়া করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মত দিয়েছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এজন্য সিটি করপোরেশন ও পৌর এলাকায় দুই সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করেছে।